ওয়ার্ড অফিসে নিয়ে যুবলীগ কর্মীকে পেটালেন কাউন্সিলর টিনু
৪ মার্চ ২০২৪ ২০:০২ | আপডেট: ৫ মার্চ ২০২৪ ০২:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো : অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে এক যুবলীগ কর্মীকে তুলে ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু। এ ঘটনায় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে নগরীর পাঁচলাইশ থানার সামনে বিক্ষোভ করতে গেলে সেখানেও কাউন্সিলরের অনুসারীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (৩ মার্চ) রাতে যুবলীগ কর্মীকে তুলে চকবাজার ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে। রাতেই তিনি কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন।
নুর মোস্তফা টিনু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নিজেকে যুবলীগ নেতা ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন টিনু। নির্বাচিত কাউন্সিলরের মৃত্যুতে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে টিনু ৭৮৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন।
মারধরের শিকার মেহেদী হাসান রাকিব চকবাজার এলাকায় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনির অনুসারী। রনিও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির মধ্যে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়টি বিভিন্নসময় গণমাধ্যমে এসেছে।
মেহেদী হাসান রাকিব সারাবাংলাকে জানান, রোববার রাত ৮টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে তার বন্ধুর অভিজিৎ সেনের মালিকানাধীন একুশে ড্রাগ হাউজ নামে একটি ফার্মেসিতে বসা ছিলেন। এ সময় কাউন্সিলর টিনু তার বন্ধুকে মোবাইলে কল করে কথা বলতে থাকেন। নিজের মোবাইলে অন্যজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন রাকিবও। কণ্ঠস্বর শুনে টিনু অভিজিতের কাছে তার পাশে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান। রাকিবের নাম শুনে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং তার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মেহেদী হাসান রাকিব বলেন, ‘অভিজিৎ আমাকে মোবাইল দিলে কাউন্সিলর টিনু সাহেব আমাকে বলেন- মেডিকেলে তোর কাজ কী, তুই মেডিকেলে যাস কেন? আমি বললাম- এখানে আমার ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। উনি বললেন- কী ব্যবসা আছে, ডকুমেন্ট এনে আমাকে দেখাবি। আমি অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে বলেন- তুই আমার নামে মানুষজনকে কী বলিস সব আমার কানে আসে, আমি কী করতে পারি, তুই দেখ। এরপর তিনি কল কেটে দেন। তবে তার কথাবার্তা আমি লাউডস্পিকারে দিয়ে আমার মোবাইলে রেকর্ড করি।’
তিনি জানান, কথোপকথনের কয়েক মিনিটের মধ্যে ৫-৬টি মোটর সাইকেলে করে ১৫-২০ জন যুবক ফার্মেসির সামনে আসেন। তাকে তুলে কাপাসগোলা এলাকায় চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাউন্সিলর আগে থেকেই বসা ছিলেন। রাকিবকে চেয়ারে বসিয়ে কয়েকজন যুবক ঘিরে ধরেন এবং কাউন্সিলর তাকে মারধর করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘কাউন্সিলর আমাকে পেটাতে পেটাতে বলেন, অনেক ভালো মানুষকে হারিয়ে ফেলেছি, তোকে হারিয়ে ফেললে কী হবে? আমার মাথায়ও আঘাত করা হয়। ১৫-২০ মিনিট পর আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। রাতেই আমি পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এজাহার জমা দিই।’
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাউন্সিলরসহ ছয় জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
এদিকে, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে পাঁচলাইশ থানার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে মেহেদী হাসান রাকিবের রাজনৈতিক সহকর্মীরা। সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে। রাকিব হামলার জন্য টিনুর অনুসারীদের দায়ী করে বলেছেন, হামলায় ৫-৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
হামলায় গুরুতর আহত আরাফাত (২৭) নামে এক যুবককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে এসেছি। ঘটনার বিষয়ে ভিকটিম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য চসিক কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনুর মোবাইলে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম