Sunday 14 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উত্তাল ইবিতে অবশেষে নিয়োগ বোর্ড শুরু

ইবি করেসপন্ডেন্ট
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৪ | আপডেট: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৯

ইবি: অবশেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইমাম নিয়োগ বোর্ডের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় এই বোর্ড শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় বিকেল সাড়ে তিনটায়। পরীক্ষা শুরু হয় উপাচার্যের বাসভবনে। এতে ১১ জন চাকরিপ্রার্থীকে ঢুকতে দেখা যায়। এ সময় উপাচার্যের বাসভবনে থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাসভবনের ফটকে অবস্থান নেয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-কর্মকর্তারা দুগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শিক্ষকদের একপক্ষ নিয়োগ স্থগিতের দাবিতে এবং অপরপক্ষ ও ছাত্রলীগ সম্মিলিত হয়ে নিয়োগ বোর্ড চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন। উপাচার্যের কার্যালয়ে বোর্ড বন্ধের দাবি নিয়ে যাওয়া শিক্ষকদের সঙ্গে বোর্ড চালু রাখার দাবি নিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় শিক্ষকরা উপাচার্যের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম পদে নিয়োগ বোর্ড ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় এ নিয়োগ বোর্ড বাতিলসহ ১২ দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ইবি কর্মকর্তা সমিতি। পরে তারা তাদের দাবি নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করেন। এ সময় উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড বন্ধ রাখার দাবি জানান। একইসঙ্গে কোনভাবেই বোর্ড করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের একাংশ উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করতে আসেন। তারা উপাচার্যকে নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত দাবি করে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার দাবি জানান। এ সময় তারা দাবি করেন— মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু চেয়ারে অধ্যাপক নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো নিয়োগ দেওয়া যবে না, বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ শুরু করা যাবে না। এ ছাড়া দুর্নীতির সব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত শেষ করতে হবে।

এদিকে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে এসে উপাচার্যের পক্ষে শাপলা ফোরাম সমর্থিত শিক্ষকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এক পর্যায়ে শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও শিক্ষকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় উভয়পক্ষকে উত্তেজিত হয়ে বাক্য বিনিময় করতে দেখা যায়। তখন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ঘটনা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও তারা ব্যর্থ হয়। অন্তত এক ঘণ্টা ধরে নিয়োগ বোর্ডের পক্ষে-বিপক্ষে বাকবিতণ্ডা শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে শাপলা ফোরামের শিক্ষকরা নিয়োগ বোর্ড বন্ধ করার দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রধান ফটক সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধন করেন।

এদিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাধার মুখে দুপুর পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা নিয়োগপ্রার্থীদেরকে প্রশাসন ভবন থেকে বের করে দেন। পরে দুপুর দুইটার উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ চাকরি প্রার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে আসেন। এ সময় কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি পক্ষ নিয়োগ বোর্ড হবে না উল্লেখ করে চাকরিপ্রার্থীদের ডেকে নিয়ে যান এবং পরবর্তীতে সময় জানানো হবে বলে জানান। তারা যাওয়ার পথেই ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে আবারও উপাচার্যের কার্যালয়ে ডেকে আনেন। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ও উপস্থিত হন।

একপর্যায়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের ভেতরের দিকে ফটক আটকানো হলে ফটকের সামনে উভয় গ্রুপের শিক্ষক নেতারা, কর্মকর্তা সমিতির নেতারা ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। এ সময় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি টিপু সুলতান ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্রলীগের বাধায় ঢুকতে পারেননি।

ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতাকর্মী বারবার ছাত্রলীগকে কলুষিত করছে। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্রলীগের কোনো ফাংশন নেই। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি ইমামের নিয়োগে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট বলেন, ‘উপাচার্যের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সুরাহা হয়নি। এরমাঝে তিনি আবারো নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। আমরা কোনোভাবেই নিয়োগ বোর্ড হতে দেব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ জন্য আমরা চায় ইউজিসির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নিয়োগ বন্ধ থাকুক।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকদের একটি পক্ষ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে উপাচার্যের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে ইবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর তাদের মতামতের কোনো প্রভাব পড়বে না।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে কখনোই জড়িত নই। এসব অভিযোগের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি আমার সততা নিয়ে এসব অভিযোগ মোকাবিলা করতে চাই।’

সারাবাংলা/একে