Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশে কাটা হয় রেললাইন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:০৫ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:১৮

ঢাকা: যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশনায় গাজীপুরের শ্রীপুরে রেললাইন কাটা হয় বলে দাবি করেছেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তার কথামতো ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান যুবদল নেতা মো. ইখতিয়ার রহমান কবির (৪৩) রেলের লাইন কেটে ফেলে। যার ফলে ঢাকাগামী ট্রেন নাশকতার কবলে পড়ে।

ঘটনার মূলহোতা কবিরসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি। একই ঘটনায় লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইমন হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সিটিটিসি জানায়, রেল লাইনে নাশকতা করে সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি সঞ্চার এবং ব্যাপক প্রাণনাশের পরিকল্পনা করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। গ্রেফতার যুবদল নেতা ইখতিয়ার রহমান কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন দলীয় উচ্চপর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে। নাশকতাকারীরা রেললাইন কাটার পর তাদের মোটা অঙ্কের টাকাও দেওয়া হয় দলীয় পর্যায় থেকে।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

রেলে নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে গাড়িতে ভাঙচুর, আগুন দেওয়া ও বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সাধারণ মানুষ রেলকে নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু ট্রেনে চলাচল করা মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে ও রেল চলাচল বিঘ্ন করতে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়। পাশাপাশি নাশকতার মাধ্যমে রেলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটানো উদ্দেশ্য ছিল তাদের।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুবদলের শীর্ষ নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবিরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কবির গাজীপুর ছাত্রদলের দুই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

তারা হলেন, গাজীপুরের আজিমুদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা, গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের বলা হয়, স্থান নির্বাচন করে নাশকতা সফল করার জন্য। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য তোহা ও মাসুম মিলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়ার বাসায় একটি মিটিং করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করে।

যেভাবে রেললাইন কাটা হয়: সিটিটিসি প্রধান বলেন, প্রথমে তাদের সিদ্ধান্ত ছিল রেল লাইনের নাট-বল্টু খুলে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা। কিন্তু তারা নাট-বল্টু খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর বিষয়টি কবিরকে জানানো হয়। পরে কবির রেল লাইন কাটার নির্দেশ দেন। পাশপাশি রেল কাটার জন্য লোকবল দেওয়ার কথা জানান। এজন্য লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইমন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথমে ইমনকে বড় লোহার পাত কাটা শেখার জন্য টাকা দেওয়া হয়।

ইমন লোহা কাটার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর স্থানীয়ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা হয়। আর লোহা কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি ঢাকা থেকে কেনা হয়। কবির, ইমন, তোহা ও মাসুম মিলে রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর মার্কেটের একটি দোকান থেকে সব যন্ত্রপাতি ১০ ডিসেম্বর কেনার পর ইমনের বাসায় রাখা হয়।

পরিকিল্পনা অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর ইমনের বাসা থেকে যন্ত্রপাতি গাজীপুর নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিন ইমন ও কবির কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে জয়দেবপুর রেল স্টেশনে যায়। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, তোহা ও মাসুম চলাচলের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করা, গ্যাস সিলিন্ডার কেনাসহ সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এই সময়ে তারা ট্রেনের শিডিউল জেনে রাখে। এরপর ১৩ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খাওয়ার পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে রওয়ানা দেয়।

এ সময়ে বেশ কয়েকজনকে পথ থেকে তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে মোট ৯ জন একত্রিত হয়ে রেল লাইন কাটার কাজ শুরু করে। আগে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ইমন অন্যদের সহযোগিতায় রেললাইন কাটেন। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কবির পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়নের সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, `এই নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করা, ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন করা এবং মানুষ যেন রেলে যাতায়াত না করে। এই লক্ষ্যে তারা রেললাইন কাটে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার ফেলে যায়। অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে তারা ঢাকায় চলে আসে। ভাড়া করা মাইক্রোবাস তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটে নামিয়ে দেয়। পরবর্তীতে রেল কাটার যন্ত্রপাতি ইমনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময়ে কবির বেশ কিছু টাকা দেয় ইমনকে। পরবর্তীতে রেল কাটায় ব্যবহৃত মালামাল রেখে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। রেল কাটা সফল হয়েছে বলে কবির নির্দেশদাতা টুকুকে জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে কবিরকেও বড় অঙ্কের টাকা পাঠান নির্দেশদাতা।’

সিসিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেফতার কবির এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, নিউ মার্কেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টিরও বেশি বাসে আগুন দিয়েছে। এই রেললাইন কাটার নির্দেশদাতা, পরিকল্পনাকারী ও বাস্তাবয়নের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও নাশকতার বেশ কয়েকটি ঘটনায় তার নাম এসেছে।

এর আগে, পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় গান পাউডারসহ ছাত্রদল কর্মী গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদেও কবিরের নাম এসেছে। বিশেষ করে মহানগর দক্ষিণ এলাকায় যত নাশকতা ঘটেছে তার বেশিরভাগ ঘটনার মূল পরিকল্পনা ও নির্দেশদাতা হিসেবে সে জড়িত বলে তথ্য রয়েছে। ডেমরায় বাসে আগুনের ঘটনায় চালকের সহকারী নিহতের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে আমরা খুঁজছিলাম। সব কটি ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কবিরকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডে আনা হবে।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতার নির্দেশনা ছিল কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেউ নির্দেশদাতাদের মধ্যে যুবদলের সভাপতি সালাউদ্দিন টুকু। টুকু তাকে ডেকে জানায়, ওপর থেকে রেলে নাশকতার নির্দেশ আছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে রেললাইন কাটার ঘটনা বাস্তবায়নে কৌশল নির্ধারণে কাউন্সিলর আজমলের বাসায় মিটিং করা হয়।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

টপ নিউজ বিএনপি রেল লাইন সালাউদ্দিন টুকু

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর