Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিলিগুড়ির সাহা বাড়ির দুর্গাপূজায় বাংলাদেশের ছোঁয়া

ঝর্না রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১১:১৭ | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩৬

শিলিগুড়ি থেকে: গল্পের শুরু ১৫০ বছর আগে। চারদিকে দেশ ভাগের ডামাডোল। বলতে গেলে কিছুই নিয়ে আসার সুযোগ ছিল না। শুধু জন্মস্থানের সঙ্গে সুতো বেঁধে রাখতে নিয়ে আসা হয়েছিল এক মুঠো মাটি। সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় বেদি। সেই বেদির ওপরে আয়োজন করা হয় দুর্গাপূজার। যা এখনও চলছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ শিলিগুড়ি জেলার মাটিগাড়া এলাকার সাহা পরিবারের গল্পটা এমনই। কয়েক প্রজন্ম শেষ হয়ে গেলেও এই দুর্গাপূজায় এখনও রয়েছে বাংলাদেশের ছোঁয়া।

বিজ্ঞাপন

বরাবরের মতো এবারও শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয় শিলিগুড়ির সাহা বাড়িতে। জেলার মাটিগাড়ার রামকৃষ্ণ পাড়ার সাহা বাড়ির পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেল, যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। জন্মভিটার যোগসূত্র টিঁকিয়ে রাখতে পরিবারটি এখনও ১৫০ বছরের পুরনো নিয়মেই পূজার আয়োজন করে।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বাংলাদেশের পাবনা থেকে গোপাল সাহার পরিবারটি চলে আসেন শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায়। সে সময় ওই পরিবারটিকে এক রকম চার হাত পায়ে দেশ ছাড়তে হয়। তখন সঙ্গে করে নিয়ে আসেন নিজ ভিটার সামান্য মাটি। পূজার জন্য যে বেদিটি তৈরি করা হয়, সেই বেদিতেই বাংলাদেশ থেকে আনা মাটি রাখা হয়। আর সেখানেই দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়।

সাহা পরিবারের সদস্য বিজন কৃষ্ণ সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে এই বেদিতেই মা দুর্গার পূজা করা হয়। এটি এখন আমাদের পরিবারের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। আমার বাবা, প্রপিতামহ এরপরে আমরা আবার পরের প্রজন্মও এই নিয়ম মেনেই মায়ের পূজার আয়োজন করবেন।

তিনি জানান, তাদের পূর্বপুরুষেরা যখন বাংলাদেশে বসবাস করতেন সেখানেও মায়ের পূজা করতেন নিয়মিত। দেশ ভাগের বছর সে নিয়ম আর পালন করা সম্ভব হয়নি। এরপর সেই ১৯৪৮ সাল থেকে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় বসবাস শুরু করেন। তারপর থেকে এ নিয়ম আবার শুরু হয়।

পূজা কমিটিতে থাকা আশুতোষ ব্যানার্জি বলেন, ১৫০ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে সাহা বাড়ির দুর্গাপূজার। এতো বছরেও পূজার নিয়ম একটুও বদলায়নি। কয়েক প্রজন্ম বদলেছে কিন্তু নিয়ম একই রকম রয়ে গেছে। গোপাল চন্দ্র সাহা এই পূজার শুরু করলেও পরবর্তীতে তার ছেলে এবং তাদের পরের প্রজন্ম এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

জানা যায়, এই পরিবারটির সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচয় ছিল। প্রতিবছরের মতো এবারও সাহা বাড়ির পূজা দেখতে মানুষের উচপে পড়া ভিড়। অষ্টমীতে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। নবমীতে অঞ্জলীর আয়োজন করা হয়। রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

পূজা কমিটির সদস্যরা জানান, আগে এই মন্দিরেই প্রতিমা তৈরি করা হতো। এখন কুমোরটুলি থেকে তৈরি করে আনা হয়। পঞ্চমীতে প্রতিমা স্থাপন করা হয়। ষষ্ঠী থেকে পূজা শুরু।

পূজা দেখতে আসা আরতি বিশ্বাস বলেন, রাস্তার এপারে আমার বাবার বাড়ি, ওপারে শ্বশুরবাড়ি। ছোট থেকে সাহা বাড়ির পূজা দেখে আসছি। পূজার আলাদা একটা বিষয় রয়ছে। তা হলো উনারা বাংলাদেশ থেকে যে এসেছেন এবং বাংলাদেশের মতো পূজা করেন সেটা স্পষ্ট। আমাদের এখানকার মতো নয়। সে জন্যই মানুষ এখানে পূজা দেখতে আসে এবং মনে রাখে।

এদিকে নবমী পূজা শেষ দশমী তিথি শুরু হয়ে গেছে। মাঝ রাত পর্যন্ত শিলিগুড়ি শিবমন্দির, মাটিগাড়া, বাগডোগরাসহ আশেপাশের এলাকার প্রতিটি পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ। বরাবরের মতো এবারও পূজার মণ্ডপ তৈরিতে বৈচিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। কে কতটা সুন্দর এবং ব্যতিক্রম  মণ্ডপ তৈরি করতে পারেন সে প্রতিযোগিতা এবারও ছিল। এবার সে তালিকায় যোগ হয়েছে চন্দ্রযান। অনেকেই চন্দ্রযানের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছেন। কেউ বানিয়েছেন রাজমহল, আবার কেউ খড়কুটো দিয়ে আবার কেউ সাজিয়েছে শাখা চুড়ি দিয়ে। এমন ব্যতিক্রম ধরনের পূজা মণ্ডপ দেখা গেল পুরো শিলিগুড়ি জুড়ে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিজয় দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।

সারাবাংলা/জেআর/ইআ

দুর্গাপূজা বিজয়া দশমী শারদীয় দুর্গোৎসব শিলিগুড়ি

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর