Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে হলবিমুখ দর্শককে হলে ফেরাল ‘মুজিব’

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ অক্টোবর ২০২৩ ০০:১৯ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৩৭

চট্টগ্রামে ‘মুজিব’ বায়োপিকের প্রায় সব শো যাচ্ছে হাউজফুল। সোমবার স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে তোলা। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে সাড়া ফেলেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি। হলবিমুখ দর্শক গত চার দিন ধরে ছুটছেন সিনেমা হলে। তিন প্রেক্ষাগৃহের প্রায় প্রতিটি শো হাউজফুল যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) হলগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, দর্শকদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী, এদের বেশির ভাগই আবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চাকরিজীবীরাও যাচ্ছেন, কেউ একা, কেউ বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। মুজিবের বায়োপিক দেখে কেউ আবেগে ভেসেছেন, কেউ বঙ্গবন্ধুর চরিত্র ও ইতিহাসের নির্মোহ রূপায়ন নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে তিনটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হয়েছে ‘মুজিব’ বায়োপিক— বালী আর্কেড মার্কেটের স্টার সিনে কমপ্লেক্স, কাজির দেউড়ির সুগন্ধা সিনেমা হল এবং ফিনলে স্কয়ারের সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্স।

স্টার সিনেপ্লেক্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ১০টি শো তাদের হলে দেখানো হয়েছে। প্রতিদিন তিনটি শো দেখানো হয়। সকাল ১১টা, বিকেল ৩টা ও সন্ধ্যা ৭টায়। সকালে দর্শক কিছু কম থাকলেও বিকেল ও সন্ধ্যার শো সবসময়ই হাউজফুল থাকে। তাদের ৮৫ আসনের হলে ১০টি শোতে এ পর্যন্ত ৭০০ জনের মতো মানুষ সিনেমাটি দেখেছেন।

অনেককে আগেভাগে টিকেট কিনতেও হলে হাজির হতে দেখা গেছে। আবার আগেই বুকিং হয়ে যাওয়ায় কাউকে কাউকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। কারণ বিকেল ও সন্ধ্যার শো দেখার জন্য আগেই টিকিট কেটে রাখছেন দর্শকরা।

স্টার সিনেপ্লেক্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশেই সিনেমাটি নিয়ে আমাদের হলগুলোতে বেশ সাড়া পাচ্ছি। দর্শকরা সিনেমাটি দেখছেন। তাদের ভালো লাগছে। প্রায়ই শো হাউজফুল থাকছে। তবে সকালে একটু দর্শক কম থাকে।’

বিজ্ঞাপন

স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘মুজিব’ দেখতে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজীব হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকজন বন্ধু মিলে সিনেমাটি দেখলাম। ভালোই লেগেছে। ছোটবেলা থেকে বইয়ে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পড়ছি। কয়েকটি সিনেমাও হয়েছে তাকে নিয়ে। তবে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে আরেফিন শুভ সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু জাতির জনক। তার নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। এটি আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করা যেত।’

সুগন্ধা সিনেমা হলের স্বত্বাধিকারী সাইফ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিলিজ হওয়ার দিনেই আমাদের হলে সিনেমাটি হাউজফুল ছিল। এখন পর্যন্ত ১০টি শো দেখানো হয়েছে। সব শোতেই দর্শকদের ভিড় ছিল। এখানে ২১৬টি সিট আছে। সব মিলিয়ে মোট ৮০০ দর্শক আমাদের হলে এ সিনেমাটি দেখেছে। সিনেমাটি আমাদের আরও এক মাস চালানোর ইচ্ছা আছে। আমাদের একটিমাত্র সিংগেল স্ক্রিন। আরেকটি থাকলে আরও বেশিদিন দেখাতাম।’

কারা সিনেমাটি দেখতে আসছেন— জানতে চাইলে সাইফ হোসাইন বলেন, ‘সব বয়সের মানুষই সিনেমাটি দেখতে আসছেন। ফ্যামিলি বা করপোরেট গ্রুপ নিয়েও আসছেন অনেকে। তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা আসছে। বলতে গেলে সবার দেখার মতো একটি সিনেমা।’

সুগন্ধা ‘মুজিব’ বায়োপিক দেখলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাসের মাস্টার্সে পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মেজবাউল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিনেমা ভালো লেগেছে। তবে ইতিহাসের অনেক কিছুই বাদ পড়েছে। বিশেষ করে জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে সিনেমাটিতে দেখানো হয়নি। ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের ইতিহাস বাদ পড়েছে। এরকম আরও অনেক বিষয় আছে। এগুলো হয়তো সাধারণ মানুষ নাও বুঝতে পারে। তবে যারা মোটামুটি ইতিহাস জানেন, তাদের সবার মনে এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন জাগবে।’

মেজবাউলের কাছেও বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে আরেফিন শুভকে মানানসই মনে হয়নি। তিনি বলেন, ‘আরেফিন শুভকে মানায়নি। সে-ও হয়তো মানিয়ে নিতে পারেনি। জাতির জনকের বায়োগ্রাফি যেহেতু, নির্মাতাদের আরও চিন্তা করা উচিত ছিল। অন্য চরিত্রগুলো বরং ভালো লেগেছে। বিশেষ করে খন্দকার মোশতাক, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রগুলো ভালো লেগেছে।’

নগরীর ফিনলে স্কয়ারের সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্সেও দর্শকদের ভিড় লেগেই আছে। প্রেক্ষাগৃহটির কর্মকর্তা মো. শাহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার প্রথম তিন দিন বলতে গেলে প্রতিটি শো হাউজফুলই ছিল। এখনো বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আজ (সোমবার) রাতের শো একদম হাউজফুল। অনেকে টিকেট নিতে এসে না পেয়ে চলে গেছে।’

এর আগে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দেশের ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ মুক্তি পেয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ মুজিব কীভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন, কীভাবে জাতির পিতাতে পরিণত হয়েছেন, সেই ইতিহাসই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিনেমাটিতে।

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটির পরিচালক ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ ও ভারতের ৪০ শতাংশ ব্যয়ে নির্মিত এ বায়োপিকের শুটিং ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে শুরু হয়। শেষ হয় একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে। গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে চলচ্চিত্রটির প্রথম পোস্টার, ৩ মে দ্বিতীয় পোস্টার ও ১৯ মে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির ট্রেইলার রিলিজ করা হয়।

ভারতের অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়দির ইংরেজি চিত্রনাট্য থেকে আসাদুজ্জামান নূরের তত্ত্বাবধানে বাংলায় রূপায়িত এই ঐতিহাসিক সিনেমায় প্রায় দেড় শ চরিত্রের মধ্যে শতাধিক চরিত্রে বাংলাদেশি শিল্পী অভিনয় করেছেন। মুম্বাইয়ের দাদাসাহেব ফিল্ম সিটি, গোরেগাঁও ফিল্ম সিটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি, টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের বাড়ির আদলে সেট সাজিয়ে দৃশ্য ধারণ করা হয়।

ছবিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া এবং বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা। তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ আহমেদ অভিনয় করেছেন।

অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ ও মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক শিল্পী।

সারাবাংলা/আইসি/টিআর

টপ নিউজ মুজিব মুজিব বায়োপিক মুজিব: একটি জাতির রূপকার সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্স সুগন্ধা সিনেমা হল স্টার সিনেপ্লেক্স চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর