সোনা চুরিতে যতবড় কর্মকর্তা জড়িত থাকুক গ্রেফতার হবে: ডিবি প্রধান
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৮ | আপডেট: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৫৫
ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা চুরির ঘটনায় যত বড় কর্মকর্তাই জড়িত থাকুক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘অপরাধ তো অপরাধই। তিনি যত বড় নেতা কিংবা কর্মকর্তাই হোক আপরাধীকে আমরা ছাড় দেবো না। আগেও ডিবি কাউকে ছাড় দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদামে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি, অর্থাৎ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আটজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর মধ্যে চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহী।’
ডিবি প্রধান আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরের মতো একটা জায়গা যেখানে কঠোর নিরাপত্তা সেখানে এতবড় একটা চুরির ঘটনা। এটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পাশাপাশি গত চার-পাঁচ মাস গুদামে কারা গেছে সেটিও তদন্তে আনা হবে। সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, দায়িত্ব পালন ও জিজ্ঞাসাবাদের পরে বলা যাবে ঘটনাটি কীভাবে হয়েছে এবং কারা ঘটিয়েছে। এক কর্তৃপক্ষ সোনাগুলো আরেক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করল। কিন্তু তারা কীভাবে বুঝিয়ে দিলো আর যারা বুঝে নিলো তারাই বা কীভাবে বুঝে নিয়েছে সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্ত শেষ করব।’
যে আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তারা কোনো তথ্য দিয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘এখনও সে পর্যায়ে যায়নি। পরে জানানো হবে।’
বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউজে তদন্ত করতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে তদন্তে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে কি না জানতে চাইল হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ডিবি স্বাধীনভাবে তদন্ত করবে। কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে না। কাস্টম হাউজের কর্তৃপক্ষ অনেক আন্তরিক, আমরা বলার পরে তারা সঙ্গে সঙ্গে আটজনকে আমাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠিয়েছে।’
যে আটজনকে কাস্টম কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছে তারা কি এ সোনা চুরির সঙ্গে জড়িত নাকি শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জড়িত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চুরির সঙ্গে জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের কেউ থাকলেও আমরা খুঁজে বের করব। সিসি ক্যামেরা নষ্ট ছিল কিংবা গুদাম থেকে সিসি ক্যামেরা গায়েব হয়ে গেছে— এ বিষয়টিও তদন্তে আনা হবে।’
সোনা চুরির ঘটনায় রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। কাস্টম হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার জানতে পারেন গুদাম থেকে প্রায় ১৫ কেজি সোনা নিখোঁজ রয়েছে। পরে গুদামে থাকা সোনার হিসাব করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গুদামে থাকা সোনাগুলো গণনা করতে গিয়ে জানতে পারে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরি হয়েছে। মামলায় আসামিদের অজ্ঞাত হিসেবে দেখানো হলেও চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহি দায়িত্বে ছিলেন গুদামের। সেই অনুযায়ী এই আটজনের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ সোনাগুলো সরিয়ে ফেলেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় কাস্টমস হাউজের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে যে, দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও এক সিপাহী লুট হওয়া স্বর্ণগুলো সরিয়েছেন। এমনকি তারা সোনাগুলো বায়তুল মোকাররম ও তাঁতি বাজারে বিক্রি করেছেন।
সারাবাংলা/ইউজে/একে