Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অরুণাচলকে নিজেদের মানচিত্রে দেখাল চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৩০ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৩০ | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১০:৫২

অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছে চীন। ছবি: অনলাইন

নতুন এক মানচিত্র প্রকাশ করেছে চীন সরকার। আর সেই মানচিত্রে ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে চীনের অংশ হিসেবে। এর আগেও চীনের মানচিত্রে বিভিন্ন সময় অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ দেখানো হয়েছে। তবে এবার প্রথম গোটা প্রদেশকেই নিজেদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দেখিয়েছে চীন। এমনিতেই শীতল সম্পর্ক থাকা দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, শুধু অরুণাচল নয়, ‘আকসাই চিন’ নামে লাদাখসংলগ্ন যে ভূখণ্ডটিকে ভারত নিজেদের বলে দাবি করে, সেটিকেও জায়গা করে দেওয়া হয়েছে চীনের এই নতুন মানচিত্রে।

বিজ্ঞাপন

এই মানচিত্র প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর মন্তব্য করেছেন, ‘কেউ কোনো আজগুবি দাবি করলেই অন্যের ভূখণ্ড তার হয়ে যায় না!’ এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একে চীনের ‘পুরনো বদভ্যাস’ বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।

এই মানচিত্র প্রকাশের চার দিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে বৈঠক হয়েছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে। আগামী সপ্তাহে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির আমন্ত্রণে চীনা প্রেসিডেন্টের দিল্লি সফরের কথাও রয়েছে। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন যোগাযোগ অব্যাহত থাকলেও সীমান্ত বা কূটনৈতিক পর্যায়ে যে উত্তেজনা রয়েই গেছে, চীনের নতুন এই মানচিত্রকে পর্যবেক্ষকরা তারই দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন। বিষয়টি নিয়ে জনমনেও যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক অতীতে ভারত একাধিকবার বলেছে, অরুণাচল কখনোই বিতর্কিত ভূখণ্ড নয়। বরং এটি স্পষ্টতই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তা সত্ত্বেও চীনের মানচিত্র প্রকাশের জের ধরে ভারতের বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, চীনের এমন অব্যাহত উসকানিমূলক পদক্ষেপের পরও কেন দেশটির প্রেসিডেন্টকে দিল্লিতে ‘আপ্যায়ন’ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বিজেপি নেতা সুব্রমনিয়ান স্বামী এই বিতর্কে সরাসরি নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভারত মাতার অখণ্ডতা রক্ষা করতে না পারলে আপনিই বরং সরে দাঁড়ান!’

কী আছে এই নতুন মানচিত্রে?

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’ গত সোমবার (২৮ অগাস্ট) জানায়, সে দেশের ‘স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপে’র ২০২৩ সংস্করণ সে দিনই প্রকাশ করা হয়েছে এবং চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তা অবমুক্ত করা হয়েছে। নতুন মানচিত্রের ছবি পোস্ট করে বলা হয়, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের ‘জাতীয় সীমানা’ আঁকার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে, সেই একই পদ্ধতিতে এই মানচিত্রটিও সংকলন করা হয়েছে।

ওই মানচিত্রটিতে ভারতের পুরো অরুণাচল প্রদেশ এবং ১৯৬২’র চীন-ভারত যুদ্ধের পর চীনের দখলে চলে যাওয়া ‘আকসাই চিন’কে দেশটির অংশ হিসেবে দেখানো হয়। এ ছাড়া তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরের ‘নাইন-ড্যাশ লাইন’কেও নিজেদের মানচিত্রে দেখিয়ে ওই দুই অঞ্চলের ওপরও এক ধরনের অধিকার দাবির চেষ্টা করেছে চীন। এর মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত অরুণাচল প্রদেশকে চীন বহুদিন ধরেই ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ হিসেবে দাবি করে আসছে। তাদের ভাষ্য, অরুণাচল দক্ষিণ তিব্বতের অংশ।

চীনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমেও এমন দাবির পক্ষে তাদের অবস্থানের প্রতিফলন দেখা যায়। অরুণাচল প্রদেশের কোনো বাসিন্দা চীনের ভিসার জন্য আবেদন করলেও তাদের পাসপোর্টে ছাপ না দিয়ে চীন স্ট্যাপল করা একটি কাগজে ভিসা দিয়ে থাকে। এই ‘স্ট্যাপলড ভিসা’র মাধ্যমে চীন বোঝাতে চায়, অরুণাচলের বাসিন্দাদের তারা ভারতের নাগরিক মনে করে না। ভারত বহুদিন ধরেই এ রীতির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।

চীনের এরকম নানা তৎপরতা থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেদের সরকারি মানচিত্রে গোটা রাজ্যকেই চীনের অংশ হিসেবে দেখানোর ঘটনা এই প্রথম। এর আগে গত এপ্রিলে চীনের পক্ষ থেকে অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন জায়গার চীনা বা তিব্বতি নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, ভারতের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

‘কার্টোগ্রাফিক অ্যাগ্রেশন’

ভারতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে যে ধরনের ‘প্ররোচনামূলক’ পদক্ষেপ নিয়ে চীন ভারতকে তাতাতে চাইছে, কূটনৈতিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘কার্টোগ্রাফিক অ্যাগ্রেশন’ বা মানচিত্র দিয়ে আগ্রাসন।

দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ স্টাডিজের অধ্যাপক শ্রীকান্ত কোন্ডাপাল্লি বলেন, ‘এটা মোটেই ভুল করে করা হয়নি। বরং প্রতিবেশী যে প্রায় ১৮টি দেশের সঙ্গে চীনের স্থল বা সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ আছে, তাদের অনেকের সঙ্গেই চীন ইচ্ছাকৃতভাবে বহুদিন ধরে এ জিনিস করে আসছে।’

ভারতের পক্ষে এটি এ কারণে আরও অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে যে দেশের বিরোধী দলগুলো বহুদিন ধরেই বলে আসছে, সীমান্তে প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার ভারতীয় ভূখণ্ড চীনের দখলে চলে গেছে বলে তাদের ধারণা। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী গত সপ্তাহে লাদাখে গিয়েও একই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন।

চীনের নতুন মানচিত্র প্রকাশের পর কংগ্রেস নেতা ও এমপি মনীশ তিওয়ারি বলেন, ‘মোদি সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত চীনের দখলে যাওয়া এলাকা আগে খালি করা। সেই জায়গায় চীনা প্রেসিডেন্টকে দিল্লিতে আপ্যায়ন করাটা কতটা উচিত, সেটাও ভাবা দরকার!’

শিবসেনা (উদ্ধব) গোষ্ঠীর এমপি সঞ্জয় রাউত মন্তব্য করেন, “চীন আমাদের জমি দখল করে নিচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে এখন তারা অরুণাচলকেও গ্রাস করতে চায়। ‘হিম্মত থাকলে’ সরকারের এখনই চীনের ভেতরেও ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালানো উচিত, যা আগে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে করা হয়েছিল।”

অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা, সীমান্ত অঞ্চলে ভারতের এলাকা চীন সত্যিই দখল করেছে কি না, তা নিয়ে ভারতে বেশ কিছুদিন ধরে যে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে সেটাকে আরও উসকে দিতেই বেইজিং এই নতুন মানচিত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

অরুণাচল প্রদেশ চীন চীনের মানচিত্র টপ নিউজ ভারত ভারত-চীন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর