সবাইকে নিয়ে বিদ্যানন্দ, সবাই মিলে বাংলাদেশ
২৪ মার্চ ২০২৩ ২১:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত ৬০ বছরের বৃদ্ধা রহিমা আক্তার। ভিক্ষা করে পেট চালান। রোজা রেখে আজ আর ভিক্ষায় বের হতে পারেননি। থলি শূন্য, ইফতারের সময় কী খাবেন! প্রতিবেশীর কাছে পেলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দের ইফতার আয়োজনের খবর। শিশুবয়সী দুই নাতিকে নিয়ে গেলেন সেখানে, পেটপুরে খেলেন, অভাব ছিল না আদর-আপ্যায়নেরও।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় নগরীর সিআরবিতে রহিমার মতো আরো চার থেকে পাঁচশ হতদরিদ্র, নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ ইফতার করতে আসেন। বিদ্যানন্দের আয়োজনে ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহযোগিতায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এই ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবীর পোশাকে তাদের খাবার বিতরণ করেছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘বিদ্যানন্দ সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছে। আনন্দগুলো যাতে আমরা সবাই ভাগাভাগি করে নিতে পারি, সে জন্য তারা কাজ করছে। আমাদের দেশে অনেকে আছে যাদের খাবার নেই, বাসস্থান নেই। সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার তাদের যে কার্যক্রম সেখানে সিএমপি সবসময় তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।’
‘ইতোপূর্বেও আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। আজ পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন। যারা রোজা রেখেছে তাদের সাথে ইফতারে যুক্ত হয়ে আমরাও আনন্দ ভাগ করে নিলাম। বিদ্যানন্দের কার্যক্রম মানুষের জন্য। সবার ওপর মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নেই। মানুষের জন্য, মানুষের উপকারের জন্য সিএমপি সবসময় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মানুষের জন্য কাজ করার বিদ্যানন্দের যে উদ্যোগ সেই কাজে সিএমপি সবসময় পাশে থাকবে।’
প্যান্ডেল টানিয়ে ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’ স্লোগানে ইফতারের আয়োজন করে বিদ্যানন্দ। প্রথমদিনের আয়োজনে ছিল চিকেন তেহেরি ও ডিম। শরবত, জিলাপি, বিস্কিট, সেমাই, আপেলসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টিও ছিল।
বিকেল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই আশপাশের ভাসমান নারী-পুরুষ-শিশু, রিকশাচালক, ভ্যানচালকরা সেখানে আসেন। বিদ্যানন্দের অন্ততঃ ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবী ব্যস্ত ছিলেন তাদের আপ্যায়নে।
ইফতার করতে আসা বৃদ্ধ রমজান আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরও এখানে পুরো রোজার মাসে ওরা (বিদ্যানন্দ) গরীব মানুষদের ইফতার করাইছে। বউ-নাতিসহ এইখানে এসে ইফতার করেছি। আজকেও চলে এসেছি। এখানে নানা ধরনের ইফতার থাকে। এখানে এসে সবার সঙ্গে ইফতার করতে পেরে অনেক ভালো লাগে।’
ফখরুল নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘রোজা রেখে রিকশা নিয়ে বের হতে পারিনি। আমরা কয়েকজন রেললাইনের পাশে থাকি। কেউ রিকশা, কেউ ভ্যান চালাই। এখানে বিনামূল্যে ইফতার করতে পারব জেনে কয়েকজন এসেছি। অনেক ভালো লাগছে।’
চট্টগ্রামে বিদ্যানন্দের এই আয়োজনের সমন্বয় করেন জোবায়দুর রশিদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রার শুরু থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রোজায় সাধারণ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সিএমপির সহযোগিতায় প্রতিদিন প্রায় ১২’শ মানুষের ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আমরা ৫০০ মানুষের বসার ব্যবস্থা করেছি। আর সিটির বাইরে ও ভেতরে ভ্রাম্যমাণ গাড়ি করে বাকিগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। বিদেশি শিক্ষার্থীও রয়েছেন বেশ কয়েকজন, তারা সবাই এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান-এর শিক্ষার্থী। আমাদের উদ্যোগটা হচ্ছে ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’। মানে কে ধনী, কে গরিব সেটা চিন্তা না করে সব ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে ইফতার করা।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এম এ মাসুদ, উপ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান ও আব্দুল ওয়ারেশ, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়াও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রথম রোজা শুরুর আগে মধ্যরাতে পথচারীদের সেহেরি বিতরণ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে সেহেরি বিতরণের সময় নগর আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, মুরাদ আহামেদ শাওন, ইয়াছিন আরাফাত, শফিউল আজম, আজাদ হোসেন, মো. ইমতিয়াজ, রহিম বাদশা উপস্থিত ছিলেন।
একই রাতে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে সেহেরি পৌঁছে দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপু। একদল তরুণ-যুবক এই কার্যক্রমে তার সঙ্গী হয়েছিলেন। নগরীর মোহাম্মদপুর, মুরাদপুর, মেডিকেল, প্রবর্তক মোড়, গোলপাহাড়, জিইসি এলাকায় রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপু সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশে এ উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। রমজান মাসজুড়ে এ কার্যক্রম চলবে।
সারাবাংলা/আইসি/একে