কিশোরীকে ধর্ষণের পর খুন, যুবকের মৃত্যুদণ্ড
১৯ মার্চ ২০২৩ ২০:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কিশোরীকে বিয়ের নামে হেফাজতে রেখে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে খুনের অপরাধে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই রায়ে তাকে দশ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৯ মার্চ) চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় দিয়েছেন।
দণ্ডিত আলী আকবর (২৯) ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। আসামি বর্তমানে পলাতক আছে।
খুনের শিকার ১৪ বছর বয়সী কিশোরী একই উপজেলার ভুজপুর থানার সৈলকুপা গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে। ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ভুজপুরের বাদুরখীল গ্রামে একটি পাহাড় থেকে কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আরিফুল আমিন সারাবাংলাকে জানান, কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে ভুজপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলা তদন্ত করে ভুজপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিন ফারুকী ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালে তৃতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার পর দারিদ্র্যের কারণে কিশোরীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৫ সালে মোবাইলে ভুল (রং) নম্বরে কলের মাধ্যমে আলী আকবরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ওই বছরের ১৮ জুলাই কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে আলী আকবর পালিয়ে যায়। আড়াই মাস পর কিশোরী তার বাবার কাছে ফিরে এলে তাকে চট্টগ্রাম শহরে একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
একমাস পর সেখান থেকে আবারও আলী আকবর তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর কিশোরীকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করে। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে বিয়ে আইনত অবৈধ হলেও শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপনের জন্য বিয়ের নাটক করা হয়। বিয়ের পর কিশোরী জানতে পারে, আকবরের আগের একটি সংসার আছে। তখন দু’জনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।
এর মধ্যে আকবর অটোরিকশা কেনার জন্য কিশোরীকে তার বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। ওই বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে কিশোরী তার বাবার কাছে গিয়ে স্বামীর জন্য এক লাখ টাকা চেয়ে ব্যর্থ হয়। এতে আকবর ক্ষুব্ধ হয়ে কিশোরীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে দেয়। এরপর প্রথম স্ত্রীও কিশোরীকে নিয়ে আলাদাভাবে বসবাসের তথ্য জেনে যায়। তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য আকবরের উপর মানসিক চাপ তৈরি করে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আকবর কিশোরীকে খুনের পরিকল্পনা করে। ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি তাকে বেড়াতে নেয়ার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যায় আকবর। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তাকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বেড়াতে যায়। ওইদিন সকাল থেকে ২০ জানুয়ারি সকালের মধ্যে কিশোরীকে শ্বাসরোধে খুন করে লাশ তার বাবার খামারবাড়ির পাশে পাহাড়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, খুনের আগে আলী আকবর অবৈধভাবে স্ত্রী পরিচয়ে নিজের হেফাজতে রাখা কিশোরীকে ধর্ষণের প্রমাণ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। এছাড়া খুনের আগে কিংবা পরে কিশোরীর যৌনাঙ্গে ধারালো কিছু দিয়ে জখমের চিহ্নও পাওয়া যায়।
পিপি খন্দকার আরিফুল আমিন জানান, ২০১৭ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) ধারায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণসহ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ছয় বছর পর আদালত এ রায় দেন।
আলী আকবরকে ঘটনার পর পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তবে জামিনে গিয়ে সে পলাতক হয়ে যায় বলে জানান পিপি।
সারাবাংলা/আরডি/একে