Monday 15 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এলডিসি থেকে উত্তরণে অর্থবহ বৈশ্বিক অংশদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে’

সারাবাংলা ডেস্ক
৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:১০

ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর্যায়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে একটি অর্থবহ বৈশ্বিক অংশদারিত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (৫ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুরে কাতার জাতীয় কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ, নেপাল এবং লাওস আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল অ্যান্ড স্মুথ ট্র্যানজিশন ফর দ্য গ্র্যাজুয়েটিং কোহর্ট অব ২০২১’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা উত্তরণ পর্যায়ে থাকা স্বল্পোন্নত দেশ; কোনো চ্যালেঞ্জ যাতে আমাদের উত্তরণের গতি কমাতে না পারে এটা নিশ্চিত করতে চাই। অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা চ্যালেঞ্জগুলো প্রশমনে সম্ভাব্য সব চেষ্টা করছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ত্বরান্বিত করা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা, প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বিনিয়োগ, ইউটিলিটি পরিষেবাগুলোকে ডিজিটাইজ করা এবং আমাদের প্রবৃদ্ধি লভ্যাংশের জন্য ইক্যুইটি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। যাই হোক, আমাদের সফলতার জন্য অর্থবহ বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের কোনো বিকল্প নেই।’

এই প্রসঙ্গে তিনি পাঁচটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন। প্রথমত, জরুরি আন্তর্জাতিক সহায়তার ব্যবস্থার জন্য এলডিসি গ্রুপগুলোর জমা দেওয়া আবেদন ডব্লিউটিও সদস্যদের ক্রমাগত যথাযথ বিবেচনা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আরও বেশি এফডিআই এবং উপযুক্ত প্রযুক্তি নিয়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট করায় এগিয়ে আসতে হবে। তৃতীয় আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি এড়াতে উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থার ধারণা রূপান্তরে সাহায্য করতে পারে।’

চতুর্থ অগ্রাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এলডিসি সমন্বিত গ্র্যাজুয়েট করার জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় শর্তে উপলব্ধ করা দরকার এবং পঞ্চমত, অভিবাসন ও রেমিট্যান্স খরচ কমাতে গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা প্রয়োজন।’

এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশন গত ১৪ বছরে সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার ‘ভিশন ২০২১’এর ভিত্তিতে ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছিলাম। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রতিটি খাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপির আকার এখন ৪৬০ বিলিয় মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, অথচ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এর আকার ছিল কেবলমাত্র ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’

তিনি বলেন, ‘জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন ৩৫তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ এবং এ দেশের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ২০২২ সালে ২ হাজার ৪২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জিডিপি গত এক দশকে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হারে টানা বেড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক আগে আমাদের জিডিপির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এমনকি এই মহামারিকালে ২০২০-২১ অর্থবছরে এদেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ঘটেছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।’

দারিদ্র হ্রাসে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেবল এক দশকেই দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ। শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে কমে ২১-এ দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে এবং শিক্ষার হার দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশে।’

রোহিঙ্গা বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয়, করোনা মহামারি ও অন্যান্য গণ-স্বাস্থ্য ঝুঁকি, জলবায়ু সংকট ও ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর ফলে পাল্টাপাল্টি অবরোধে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে- তা মোকাবিলা করছে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠ ও লাও পিডিআর’র উপ-প্রধানমন্ত্রী সালেমক্সে কোমাসিথ।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম