কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় এক বছরে ১০৩৪ শ্রমিকের মৃত্যু
২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৪ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৭
ঢাকা: ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৪ জন শ্রমিক নিহত এবং ১ হাজার ৩৭ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের মধ্যে ১ হাজার ২৭ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী। আহতদের মধ্যে ৯৬৪ জন পুরুষ এবং ৭৩ জন নারী।
সোমবার (২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিন ‘বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্রভিত্তিক বিলস জরিপ-২০২২’ প্রকাশ করা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের উপর ভিত্তি করে বিলস এই জরিপ করেছে।
এর আগে, ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১০৫৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং আহত হন ৫৯৪ জন শ্রমিক। এছাড়া ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় বিভিন্ন খাতে ৭২৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং আহত হন ৪৩৩ জন শ্রমিক।
জরিপ অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পাশাপাশি নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে মারা গেছেন ও আহত হয়েছেন। গত বছর নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হন ১৩৫ জন আর আহত হন ১৫৫ জন। নির্যাতনের ধরণগুলোর মধ্যে রয়েছে- শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ, মারধর ইত্যাদি।
২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের শিকার হন ৩৩০ জন শ্রমিক। এরমধ্যে ২১৩ জন নিহত, ৭৪ জন আহত, ১ জন নিখোঁজ, ৪২ জন আত্মহত্যা করেন। ৩৩০ জনের মধ্যে ২৫২ জন পুরুষ এবং ৭৮ জন নারী শ্রমিক। এছাড়া ২০২১ সালে ৩০০ জন ও ২০২০ সালে ৩৬৪ জন কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের শিকার হন।
কর্মক্ষেত্রে খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি (৪৯৯ জন) শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষিখাতে। এছাড়া দিনমজুর ৪৬ জন, কনটেইনার ডিপোতে ৪৪ জন, মৎস্য ও মৎস্য শ্রমিক ৪৩ জন, ইলেক্ট্রিক শ্রমিক ২২ জন, নৌপরিবহন খাতে ১৫ জন, হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ১২ জন, ইটভাটা শ্রমিক ১০ জন, জাহাজ ভাঙা শিল্পে শ্রমিক সাতজন, ক্যামিকেল ফ্যাক্টরি শ্রমিক ছয়জন এবং অন্যান্য খাতে ১০০ জন শ্রমিক নিহত হন।
২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১০৩৭ জন শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে মৎস্য খাতে সর্বোচ্চ ৫০৩ জন শ্রমিক আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কনটেইনার ডিপোতে ১২৫ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক খাতে ৯০ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া পরিবহন খাতে ৮৭ জন, নির্মাণ খাতে ৮৬ জন, নৌ পরিবহন খাতে ২৫ জন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে ২৩ জন, উৎপাদন শিল্পে ১৫ জন, কৃষি শিল্পে ১৫ জন, মেডিসিন ফ্যাক্টরীতে ১২ জন, দিনমজুর নয়জন, স্টিল মিলে সাতজন এবং অন্যান্য খাতে ৪০ জন শ্রমিক আহত হন।
সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, বজ্রপাত, অগ্নিকাণ্ড, সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলারডুবি, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, মাথায় কিছু পড়া, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ দুর্ঘটনা, দেয়াল/ছাদ ধসে পড়া, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে জানিয়েছে বিলস।
এছাড়া ২০২২ সালে বিভিন্ন সেক্টরে সবমিলিয়ে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ১১৫টি (৭৯ শতাংশ) শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫টি (৮ শতাংশ) শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে বিড়ি শিল্পে। এছাড়া পরিবহনে ১১টি, টেক্সটাইল শিল্পে ১০টি, হোটেল রেস্টুরেন্ট খাতে ৫টি, রেলওয়েতে ৪টি এবং অন্যান্য খাতে ২২ টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে।
সারাবাংলা/আরএফ/এমও