ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা থেকে শতবর্ষী বাবাকে নিয়ে জাতীয় ইদ্গাহ মাঠে ইদুল আজাহার প্রধান জামাতে অংশ নিতে এসেছেন মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক রাজু। বাবা আলহাজ্ব আজমত আলী সরকারের ইচ্ছা পুরণের জন্যই এত দূরে আসা। মূল বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর। বর্তমানে ঢাকার বাসিন্দা।
আবদুর রাজ্জাক জানান, বাংলা ১৩২৯ সনে তার বাবার (আজমত আলী) জন্ম। জীবনে অনেক কিছু দেখেছেন। পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। কাঠ ও শাড়ির ডিলার ছিলেন। ভারতের আসামকেন্দ্রিক তার ব্যবসা ছিল। তাই জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ ছাড়াও অবিভক্ত ভারতের কলকাতা ও আসামসহ নানা জায়গায় ইদ জামাতে অংশ নিয়েছেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় অনেকগুলো ইদ করলেও কখনো জাতীয় ইদগাহে নামাজ পড়া হয়নি তার।
তিনি আরও জানান, সকালে যখন বাবাকে জিজ্ঞেস করেন কোথায় নামাজ পড়বেন? বাবা তাকে বলেন— বড় কোনো ইদ জামাতে অংশ নিতে চান। ছেলে তাকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও জাতীয় ইদগাহের কথা বলেন। জাতীয় ইদ্গাহে দেশের প্রধান ইদ জামাত হয় তাই এখানেই আসার ইচ্ছা পোষণ করেন আজমত আলী। সেই অনুযায়ী এতদূর থেকে আসা। যদি কোনো কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন, দরকার হলে বাইরে রাস্তায় নামাজ পড়বেন চিন্তা করে বাসা থেকে জায়নামাজও নিয়ে এসেছেন তারা। কিন্তু বাইরে পড়া লাগেনি। প্রধান ইদ জামাতে অংশ নেওয়া ৩৫ হাজার মুসল্লির অংশ হয়ে তারা ইদ্গাহ মাঠের ভেতরেই নামাজ আদায় করতে পেরেছেন।
এখানে এসে নামাজ পড়ায় কেমন লাগছে— জানতে চাইলে আধোকণ্ঠে ১০০ বছরের আজমত আলী সরকারের বলেন, ‘এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।’ তার মতো অনেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আজ জাতীয় ইদগাহের প্রধান জামাতে অংশ নিতে এসেছেন। কেউ এসেছেন প্রথমবারের মতো আবার কারও জন্য এটি পারিবারিক ঐতিহ্য। এভাবে নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলা হয়ে ওঠে জাতীয় ইদগাহ মাঠ।
জাতীয় ইদগাহ মাঠে নারীদের জন্যও আলাদা করে নামাজের ব্যবস্থা আছে। তাই বেইলি রোড থেকে দেশের প্রধান ইদের জামাতে যোগ দিতে এসেছেন রওনক বিশাখা শ্যামলি। আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও অভিনেত্রী বোনকে নিয়ে এসেছেন। ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা হলেও এবারই প্রথম ইদ জামাতে আসলেন তিনি। জানালেন, অনেক স্বপ্ন ছিল জাতীয় ইদগাহে নামাজ পড়ার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখি মেয়েরাও ইদের নামাজ পড়েন, যা দেখে আমারও ইচ্ছা হত। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুব ভালো লাগছে তার।
এগারো ও পাঁচ বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে একইরকম পাঞ্জাবি পরে জাতীয় ইদ্গাহের এসেছেন পল্টনের বাসিন্দা কাজী মাহমুদুল হাসান। জানান, শিশুকালে তারা বাবার হাত ধরে এখানে ইদের নামাজ পড়তে আসতেন, আর এখন নিজের সন্তানদের নিয়ে আসছেন।
মিরপুর ১১ থেকে জাতীয় ইদগাহে এসেছেন মোহাম্মদ লোকমান। আশেপাশে ইদ জামাতের ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিবছরই জাতীয় ইদগাহের প্রধান জামাতে অংশ নিতে আসেন তিনি। এখানে আসলে ইদের উৎসব মনে হয়, তাই প্রতিবছর এখানেই আসেন বলে জানালেন তিনি।
ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডের আশেপাশে ইদ জামাতের সুযোগ থাকলেও জাতীয় ইদগাহে ইদের প্রধান জামাতে অংশ নিতে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। করোনাভাইরাস মহামারির জন্য ইদ্গাহে এসে নামাজ পড়তে পারেননি। এবার অন্যান্য মুসল্লিদের সঙ্গে ইদ জামাতে অংশ নিয়ে খুব ভালো লাগছে বলে জানালেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।