ই-ক্যাব সদস্যদের জন্য বিজনেস সাপোর্ট সেন্টার করব: শমী কায়সার
১৬ জুন ২০২২ ০১:০৮ | আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ০১:১৪
ঢাকা: নির্বাচিত হলে ই-কমার্স খাতের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) নির্বাচনে অংশ নেওয়া ‘অগ্রগামী’ প্যানেলের লিডার ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শমী কায়সার। তিনি বলছেন, নির্বাচনে জিততে পারলে সদস্যদের উন্নয়নে সাপোর্ট সেন্টার করবেন। খাতটিকে শৃঙ্খলায় ফেরাতে যেসব নীতি তৈরির কাজ চলছে, সেইসব নীতি তৈরিতে সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করে নীতিগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। একইসঙ্গে সদস্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাও করবেন। খুব শিগগিরই শুরু করবেন ই-কমার্স খাতের ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ।
ই-ক্যাব নির্বাচন সামনে রেখে সারাবাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন শমী কায়সার। তিনি ই-ক্যাবের বর্তমান সভাপতি, এর আগেও একবার সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ৯টি পরিচালক পদে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তিনি সংগঠনটির সভাপতি হিসাবে হ্যাটট্রিক করবেন।
আগামী ১৮ জুন ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) নির্বাচনের ভোট হবে। নির্বাচনে এবার ভোটার ৭৯৫ জন। এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দু’টি প্যানেল। এর মধ্যে ‘অগ্রগামী’ প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ধানসিঁড়ির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শমী কায়সার। আরেক প্যানেল ‘ঐক্য’র টিম লিডার প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ। সংগঠনটিতে এবারই সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই প্যানেলের প্রার্থীরাই দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিশ্রুতি, চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ই-ক্যাবের ইতিহাসে এবারই অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ই-ক্যাবে দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করা শমী কায়সার সারাবাংলার মুখোমুখি হয়েছেন। তার সঙ্গে কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো সারাবাংলার পাঠকদের জন্য।
সারাবাংলা: ই–ক্যাবে এবারই সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে এই খাতের কতটা উন্নতি হয়েছে?
শমী কায়সার: প্রথম কথা হচ্ছে, এবারই প্রথম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন এবার প্রথম নয়। গত দুই বছর আগে যখন নির্বাচন হয়েছে, তখন মনোনয়নপত্র বিক্রিই হয়েছে ১১টি। ওই নির্বাচনে একটিই প্যানেল ছিল। নির্বাচন করার জন্যই লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন অ্যাসোসিয়েশন ছোট ছিল। নির্বাচন কমিশনার ছিলেন এনআই খান (সাবেক আইসিটি সচিব ও এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক)। এখন ইন্ড্রাস্ট্রি অনেক বড় হয়েছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় শিল্পটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। এখন এই খাতের বাজার প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার। প্রথম দিকে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিল মাত্র ৫০ জন। এখন সদস্য সংখ্যা ১৭০০। ভোটার ৭৯৫ জন। আমি নিজে দুইবার সভাপতি ছিলাম। সভাপতি হিসেবে এটি আমার জন্যে অনেক ভালো লাগার একটি বিষয়। আজ আমরা অ্যাসোসিয়েশনটিকে এই জায়গায় আনতে পেরেছি বলেই অনেকই এই নির্বাচনে আসতে চাইছে, নেতৃত্বে আসতে চাইছে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এটি আমাদের জন্য গৌরবের।
সারাবাংলা: দুই মেয়াদে ই–ক্যাব সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। করোনা মহামারির সময়ও আপনিই ই–ক্যাব সভাপতি ছিলেন। এই সময়ে আপনাদের সফলতা কী?
শমী কায়সার: আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে করোনার সময় প্রাইম ব্যাংকের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম ই-ক্যাব সদস্যদের জন্য। ১০০টি কোম্পানির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে ঋণ পেয়েছে ৩৪টি কোম্পানি। তারা নিতে পেরেছে, কারণ তাদের কাগজপত্র ঠিক ছিল। ই-কমার্সকে একটি খাত হিসাবে চিহ্নিত করার কাজটি আমরা করছি। ব্রাক ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একটি এমওইউ হয়ে আছে। এগুলো বড় অগ্রগতি।
সারাবাংলা: আপনাদের প্যানেলের সুর্নির্দিষ্ট এজেন্ডা কী? সদস্যদের জন্য এবার নতুন কী করতে চান?
শমী কায়সার: নীতিমালা পর্যায়ে আমরা নতুন কিছু কাজ করতে চাই। কিছু নীতির সংস্কার ও নতুন কিছু নীতি করতে চাই। এর মধ্যে রয়েছে ‘ক্রস বর্ডার পলিসি’। বাংলাদেশে বসে থাকলেও সারাবিশ্বই কিন্তু আপনার মার্কেট। সে কারণে ক্রস বর্ডার পলিসি প্রয়োজন। তবে এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা তৈরি করতে হবে, এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব। ক্রস বর্ডার পলিসি করতে পারলে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে সারাবিশ্বই হবে আমাদের বাজার।
নারীদের জন্য আমরা কিছু নীতিমালায় পরিবর্তন আনব। কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সেল গঠনের কাজ চলছে। এর মূল কাঠামো এটুআইয়ের তৈরি, যা বাস্তবায়ন করছে সরকার। ই-ক্যাব তাতে সহায়তা করছে। এছাড়া অটোমেশন ও স্বচ্ছতা বাড়াতে এস্ক্রো সিস্টেমের কাজ চলছে। এর ফুল অটোমেশনের কাজ করছে এটুআই। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে অর্থের লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকবে। আরেকটি বড় জায়গা হবে সেন্ট্রাল লজিস্টিক সেল।
এর বাইরে একেবারেই নতুন যে কাজটি করতে চাই, সেটি হচ্ছে বিজনেস সাপোর্ট সেন্টার। আমরা এক বছর ধরেই এর কথা ভাবছি। করেনার মধ্যে দেখেছি, আমাদের অনেক নতুন উদ্যোক্তা এই খাতটিতে যুক্ত হয়েছে। সদস্যদের ডিজিটাল লিটারেসি দরকার। অনেক সময় এনবিআরের কিছু ইস্যু থাকে। এই কাজগুলো আমরা বিজনেস সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে করতে চাই। সদস্যদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য মেম্বারশিপ সাপোর্ট সেন্টার করা হবে। সেটি আমরা সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করে দেবো। করোনার আগে মেম্বারদের সঙ্গে আমাদের যে আড্ডা হতো, আমরা সেক্টর ধরে ধরে প্রতিমাসে একটি আড্ডার আয়োজন করব। ফান্ডিং নিয়েও আমরা কাজ করব।
সারাবাংলা: বিশ্বের নামি–দামি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দিতে কী করবেন?
শমী কায়সার: যখন শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছিল, তখন আমরাই বলেছিলাম দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দেওয়া খুব প্রয়োজন। এখন বিশ্বায়নের যুগ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আসবে। এ অবস্থায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্য আমরা এরই মধ্যে বাণিজ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। একটি খসড়া তৈরি হয়েছে। পুরো আইনটি যখন তৈরি হবে, তখন দেশীয় প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা পাবে।
সারাবাংলা: করোনা পরবর্তী সময়ে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা কমে গেছে…
শমী কায়সার: আমি এ কথার সঙ্গে একমত নই। কিছুদিন আগেও প্রতিদিন ২ লাখ ৭০ হাজার ডেলিভারি ছিল। এখন প্রতিদিন তিন লাখ ডেলিভারি হচ্ছে। অর্থাৎ কেনাকাটা কমেনি। আমার মনে হয়, প্রতিদিনই শিল্পটির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তা না হলে ২২ হাজার কোটি টাকার মার্কেট হতো না।
সারাবাংলা: ই–কমার্সের জনপ্রিয়তাও কমেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
শমী কায়সার: কিছু স্ক্যাম হয়েছে, সেটি আমরা কাটিয়ে উঠেছি। এ কারণেই কিন্তু আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি স্ট্যার্ন্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) করেছি। সবাই এখন নিয়ম মেনে ব্যবসা করছে। আমাদের এখন ইন্ড্রাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং করতে হবে। খুব শিগগিরই আমরা ইন্ড্রাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ শুরু করব।
সারাবাংলা: ই–কমার্স কেলেঙ্কারিতে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল, সেই আস্থা কি ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন?
শমী কায়সার: সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিছু ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। আমরা এখন ইন্ড্রাস্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ের কথা বলছি। আমরা নতুন নতুন পলিসি তৈরি করেছি। সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজম্যান্ট সেল গঠন করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল লজিস্টিক সেল গঠন করা হচ্ছে। পেমেন্টে স্বচ্ছতা আনতে এস্ক্রো সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এই কাজগুলোতে হয়েছে বা হচ্ছে। এই নীতিগুলো যখন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে, তখন এই ইকোসিস্টেমটি আরও উন্নত হবে। আমরা পলিসিগুলো শুরু করেছি, হয়তো আমরাই তা বাস্তবায়ন করব।
সারাবাংলা: ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের কথা বলা হচ্ছিল। এর অগ্রগতি কী?
শমী কায়সার: এটি এখনো পাইলট পর্যায়ে আছে। এটি করার কারণ হচ্ছে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্স আলাদা করে ছিল না। লাইসেন্স পেতে তাদের বহু দিন অপেক্ষা করতে হয়। বিজনেস আইডেন্টিফিকেশনের কাজটি বেশকিছু মন্ত্রণালয় করছে। এটি হলে আরও স্বচ্ছতা ফিরে আসবে।
সারাবাংলা: সামগ্রিকভাবে এক কথায় যদি আপনার প্রতিশ্রুতির কথা বলেন…
শমী কায়সার: সদস্যদের উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে নীতি প্রণয়নে সরকারকে যেমন সহযোগিতা করব, পাশাপাশি এই খাতের উন্নয়নে সেই নীতি বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। সদস্যদের ব্যবাসায়িক উন্নয়নে সংগঠনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।
শমী কায়সার: সারাবাংলাকে ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর