‘ইতিহাস থেকে জিয়াকে মুছে ফেলা যাবে না’
২৯ মে ২০২২ ২২:৫৫ | আপডেট: ৩০ মে ২০২২ ১২:৫৮
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা যত সমালোচনাই করুক জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস থেকে কখনো মুছে ফেলতে পারবে না।
রোববার (২৯ মে) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ জিয়াউর রহমানকে যে যত ইচ্ছা খলনায়ক বলুক, পাকিস্তানি চর বলুক আর তাকে সামরিক জান্তা থেকে উঠে আসার কথা বলুক তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ, এই দেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে তিনি প্রথিত হয়ে গেছেন। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে, তাকে কখনো মুছে ফেলা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার বাইরে যাচ্ছি, আমরা বিভিন্ন জেলায় সম্মেলন করতে যাচ্ছি- আমরা দেখছি মানুষের কী আকুতি, কী আবেগ। কালকে যখন যশোর থেকে ঝিনাইদহ যাচ্ছি, দেখি পথে পথে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে যেতে চায়।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হচ্ছেন আমাদের সেই আলোকবর্তিকা। যার দিকে তাকিয়ে আমরা কথা বলব। তার তো ব্যর্থতা নেই। তিনি শহিদ হয়ে গেছেন। কিন্তু তার আদর্শ তো ফুরিয়ে যায়নি। তিনি যে দর্শন দিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, তিনি যে দর্শন দিয়েছিলেন আমাদের উন্নয়নের রাজনীতি, তিনি যে দর্শন দিয়েছিলেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনোদিন আমরা আপস করব না- সেই রাজনীতি তো টিকে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আরেকজন নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই পতাকাটা হাতে তুলে নিয়েছিলেন যেই পতাকা শহিদ জিয়ার পতাকা ছিল, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র আর উন্নয়নের পতাকা ছিল। ওই পতাকা নিয়ে দেশনেত্রী নয় বছর সংগ্রাম করেছেন, দীর্ঘ সংগ্রাম। রাস্তায়, পথে-প্রান্তরে, আমাদের এই নেতাদেরকে সঙ্গে নিয়ে, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন এবং সফল হয়েছেন। তিনিই ১৯৯০ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।’
‘আজ আবার যখন আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট- দেশের গণতন্ত্র ধবংস হয়ে গেছে, আমাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে গেছে, আমাদের সব কিছু উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে, ম্লান হয়ে যাচ্ছে, তখন আবার আমাদের সামনে এসে আবির্ভুত হয়েছেন তারই যোগ্য উত্তরসূরী তারেক রহমান। যিনি আমাদের সুদূর থেকে পথের দিশা দেখাচ্ছেন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘সেই টেমসনদীর পার থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা করবেন-এটা কী সম্ভব হবে?‘— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব অবশ্যই সম্ভব হবে, অবশ্যই সম্ভব হবে। কারণ তারেক রহমান সেই রাজনীতি ধারণ করেছেন সেই রাজনীতি সারাদেশের মানুষের রাজনীতি। এখন মানুষ যে মুক্তি চায়, তার হারানো অধিকার ফিরে পেতে চায়, স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চায়। মানুষ এই হত্যা-ধর্ষণ-খুন-জখমের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। তখন ওই দর্শন, জিয়াউার রহমানের দর্শন, যা তারেক রহমান ধারণ করে আছেন- সেটা অবশ্যই এখানে সফল হবে।’
‘আওায়ামী লীগ একদিন থাকলেও ক্ষতি’— এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পাচার করা অর্থ তারা না কি ফিরিয়ে আনবে। আরেক শয়তানি শুরু করবে আবার। অর্থাৎ নিজেরা যে টাকা পাচার করেছে সেগুলো ফিরিয়ে এনে জায়েজ করবে। তারা দেশের সম্পদ লুট করা সম্পদ ফিরিয়ে নিয়ে এসে আবারও লুটপাটের সুযোগ করে দেবে। এদের কোনো মতেই বিশ্বাস করা যায় না। আওয়ামী লীগকে কোনো মতেই আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যায় না। একদিন থাকলেও আমাদের ক্ষতি।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম