‘পুলিশের কারণে পারলাম না, স্বামী তালাক দিলে আত্মহত্যা করব’
২৯ এপ্রিল ২০২২ ২২:২৪ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৩:৩০
লালমনিরহাট: আদিতমারী থানার ভিতরে স্বামীর সামনে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন (২৩)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহত গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শঠিবাড়ি এলাকার রুবেল মিয়ার স্ত্রী। তিনি একই উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি ভেটেশ্বর গ্রামের ইসলাম মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় সাবিনা ইয়াসমিনকে দুই বছর আগে বিয়ে করেন রুবেল মিয়া। দুই স্ত্রীর কারণে প্রায় সময় সংসারে বিবাদ লাগেই থাকত। অবশেষে কৌশলে দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে তার বাবার বাড়িতে রাখেন স্বামী রুবেল। বিবাদ এড়াতে বাবার বাড়িতে থাকলেও সাবিনার খোঁজখবর রাখতেন না স্বামী রুবেল। এ নিয়ে দুই জনের মাঝে সম্পর্কের দূরুত্ব তৈরি হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘বিশেষ আলাপ’ করতে আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের শীববাড়ি এলাকায় সাবিনাকে ডেকে নেন স্বামী রুবেল। এসময় তাদের বেশ বিতর্ক বাঁধে। তখন স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে আদিতমারী থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশের হস্তক্ষেপে উভয়পক্ষের পরিবারের উপস্থিতিতে আপাতত দুই পরিবার তাদের দুই জনের দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত হয়। এসময় সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামীর সঙ্গে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরে। কিন্তু তাতে রাজি হননি স্বামী রুবেল মিয়া। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে থানার বাইরে এসে বিষ কিনে পুনরায় থানার ভিতরে ঢুকে শেষ বারের মত স্বামীর সঙ্গে যেতে অনুমতি প্রার্থনা করেন সাবিনা। কিন্তু তাকে বাড়িতে তো নয়, তালাকের প্রস্তাব দিলে স্বামী ও থানা পুলিশের সামনেই বিষপান করেন সাবিনা।
বিষয়টি বুঝতে পেয়ে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক সাবিনা ইয়াসমিনকে উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে বেডে থাকা গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘দুই বছর সংসার করার পর যদি স্বামী তালাক দেওয়ার ঘোষণা দেয়, তাহলে এই জীবন রেখে কি লাভ? তাই থানার ভিতরে স্বামী ও একাধিক পুলিশের সামনেই বিষ খেয়েছি মরার জন্য। কিন্তু পুলিশের কারণে মরতেও পারলাম না। স্বামী তালাক দিলে আমি আত্মহত্যা করব।’
আহত গৃহবধূর স্বামী রুবেল মিয়া বলেন, ‘আপাতত নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাকে তালাক দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমার সঙ্গে যেতে না পেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন থানার ভিতরে আমার ও পুলিশ সদস্যদের সামনেই বিষ পান করে।’
আদিতমারী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ দত্ত বলেন, ‘সাবিনা ইয়াসমিনের পাকস্থলি ওয়াশ করে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আপাতত আশংকামুক্ত।’
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের দুই পরিবার বসে বিবাদের নিষ্পত্তি করেছেন বলে শুনেছি। এরপর এমন ঘটনা ঘটলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তার চিকিৎসা চলছে।’
সারাবাংলা/এমও