Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা নিয়ে রুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ এপ্রিল ২০২২ ১৮:৫৯ | আপডেট: ৫ এপ্রিল ২০২২ ২২:২৭

ফাইল ছবি

ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া কারাবিধির ৯৮০ বিধিটি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি দেশের কারাগারগুলোর কনডেম সেলে থাকা আসামিদের জন্য কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি প্রিজন) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার সিনিয়র জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন আসামির করা এক রিটের শুনানি নিয়ে মো. বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনি কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনি ধাপ অতিক্রম করতে হয়।

তিনি বলেন, প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের সুযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শিশির মনির আরও বলেন, সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯-এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আইনি বৈধতা তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, রিটে জেল কোডের ৯৮০ বিধি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেম সেলে রাখা হবে। আজ জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে একজন ব্যক্তিকে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, রুলে সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে কনডেম সেলে থাকা আসামিদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে কারা মহাপরিদর্শককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এর আগে, গত ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির এবং কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম রিট দায়ের করেন।

রিটে আবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে বর্তমানে ২ হাজারের বেশি ফাঁসির আসামি কারাগারগুলোর কনডেম সেলে রয়েছে।

রিট আবেদনে আরও বলা হয়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়। আবার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। এরপর আবার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে (আপিল বিভাগে) আপিল করার সুযোগ রয়েছে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আবার রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদনের সুযোগও রয়েছে। সবশেষে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করতে পারেন আসামি। রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন গ্রহণ না করলেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু দেশের বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা হচ্ছে। তাই এটি চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

কনডেম সেল হাইকোর্টে রিট

বিজ্ঞাপন

লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৯

আরো

সম্পর্কিত খবর