Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে, সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে?’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৫৮ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:০০

ঢাকা: আলোচিত নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার বলেছেন, বিগত দিনে কমিশনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে?

তিনি বলেন, কথাটা রূপক হলেও এটাই সত্য। নির্বাচনের নামে সারাদেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূলে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচন বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়।
রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আইন প্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো?

অবাধ,সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাবিঘ্ন দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে, বলেন মাহবুব তালুকদার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমূলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই, গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না। বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তসমূহ অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্খা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতারাও উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনও গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বিদায়কালে আত্মবিশ্লেষণের তাগিদে বলি, নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যে সকল অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। লিখিতভাবে যে সব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভূক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না। আমাদের কার্যকালের শেষপর্যায়ে এসে বিগত কয়েক মাসে অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে গত পাঁচ বছরে যা কিছু বলেছি, তাতে কোনো ফলোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে, সংকটের সমাধান হবে না। এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সকল সংকটের সমাধান দেখতে চাই।’

বিএনপির সুরে কথা বলেন এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভাষা আমি বুঝি না, তারা কোন সুরে কথা বলে, সেটাও আমার জানা নেই। তবে আমি নীরব জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে সব সময় কথা বলি, তাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচজনের একজন। গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে গণতন্ত্রের সংখ্যালঘু হিসেবে আমি হেরে গেলাম এমন ঘটনা রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন কমিশনের কথা বলতে গিয়ে আমাকে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি। বলা হযেছে আমি যা বলেছি তা সংবিধানবিরোধী। কিন্তু ভাব প্রকাশের, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানই আমাকে দিয়েছে। সংবিধান রক্ষার জন্য আমি শপথ গ্রহণ করেছি। প্রতিনিয়তই আমি চিন্তা করেছি সংবিধান রক্ষার জন্য যা করতে হবে, আমি তাই করবো।’

সিইসির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তভাবে কথা বলতে চেযেছি। এসব কথা সেখানে বলাটা সমীচিন হতো না। তাই সেখানে থাকিনি।’

সারাবাংলা/জিএস/একেএম

টপ নিউজ মাহবুব তালুকদার

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর