হাসান আজিজুল হক আর নেই
১৫ নভেম্বর ২০২১ ২১:৫৮ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ২২:৫৩
ঢাকা: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক আর নেই। কয়েক মাস ধরে শয্যাশায়ী অবস্থায় নিজ বাসা ‘উজান’-এ চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে সেখানেই ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান সারাবাংলাকে তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কিছুদিন ধরেই হাসান আজিজুল হক অসুস্থ ছিলেন। সবশেষ ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর তিনি কিছুদিন ভালো ছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তিনি খেতেই পারছিলেন না। সবশেষ আজ না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন।
জুলাই মাসে বাথরুমে পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে গত ২১ আগস্ট তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়েছিল। প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা শেষে ৯ সেপ্টেম্বর তাকে ফের রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন- নন্দিত গদ্যশিল্পী হাসান আজিজুল হক
হাসান আজিজুল হকের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান জানিয়েছেন, বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা ছিল, ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়ার পরও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক শেষ পর্যন্ত আর শরীরের সঙ্গে পেরে উঠলেন না। অধ্যাপনার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় অনন্য এক মানে পৌঁছে যাওয়া হাসান আজিজুল হক ঠাঁই নিলেন অনন্তলোকে।
অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে রাজশাহী মহানগরীর চৌদ্দপাই এলাকার ‘বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটিতে (বিহাস)’ নিজ বাসা ‘উজান’-এ বসবাস করছিলেন তিনি।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয় হাসান আজিজুল হককে। ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে তাকে দেওয়া হয় স্বাধীনতা পুরস্কার। এছাড়া সাহিত্যে অবদানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন হাসান আজিজুল হক। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দ পুরস্কারও ছিল তার ঝুলিতে।
সারাবাংলা/এএম/পিটিএম/টিআর