Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

“বিভাগ হবে পদ্মা-মেঘনার নামে, ‘কু’ দিয়ে নয়”

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৫৮ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪২

ঢাকা: আরও নতুন দুইটি বিভাগ করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এসব বিভাগের নাম কোনো জেলার নামে নয়, দেশের প্রধান দুই নদীর নামে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ফরিদপুর বিভাগের নাম দেবো পদ্মা। আর কুমিল্লা বিভাগের নাম হবে মেঘনা। কারণ, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’— এই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। তাই দুই নদীর নামে হবে দুই বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) কুমিল্লা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভাগের ব্যাপারে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি দুইটা বিভাগ বানাব দুইটা নদীর নামে। একটা পদ্মা, একটা মেঘনা। এই দুই নামে দুইটা বিভাগ করতে চাই।’ এ সময় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘আপা কুমিল্লার নামে?’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কু নাম দেব না আমি। আমি কুমিল্লা নামে দেব না। তোমার এই কুমিল্লা নামের সঙ্গে মোশতাকের নাম জড়িত।’

অপর প্রান্ত থেকে কুমিল্লা-৬ সদর আসনের সরকার দলীয় সংসদ বাহাউদ্দিন আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘মোশতাকের কুমিল্লা না আপা।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘নো, আমি দেব না তো বললাম। ওই কুমিল্লার নাম নিলেই মোশতাকের নাম মনে পড়ে।’

এ সময় বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘কোনো কুলাঙ্গারের উপর দেশের পরিচয় হয় না আপা। বাংলাদেশের পরিচয় বঙ্গবন্ধুর উপর, মোনায়েম খানের উপর না। বঙ্গবন্ধুকে চেনে সারাবিশ্ব। যখন কেউ বাংলাদেশকে চিনত না তখন বলতো শেখ মুজিবের দেশ। কোন কুলাঙ্গারের পরিচয়ে পরিচিত আমরা হব না।’

বিজ্ঞাপন

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘বাহার এক মিনিট দাঁড়াও। তুমি যখন কুমিল্লা বলো তখন কুমিল্লা নাম হবে কেন? তাহলে তো চাঁদপুর বলবে আমাদের নাম হবে, নোয়াখালী বলবে তারা সব থেকে পুরানো। কুমিল্লা তো ত্রিপুরার একটা ভগ্নাংশ।’ বাহাউদ্দিন বাহার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘আপনি তো এতগুলো বিভাগ দিয়েছেন। কোথাও সমস্যা হয়নি।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ফরিদপুর বিভাগ করব পদ্মা নামে। ফরিদপুর নাম দিচ্ছি না। ফরিদপুর বিভাগের নাম দেব পদ্মা। আর কুমিল্লা বিভাগের নাম হবে মেঘনা। কারণ, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’ এই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে, মুক্তিযুদ্ধ করেছে।’

তারপরও বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপা আমাদেরটা আমাদের নামে দেন। এখানকার সব মানুষ কুমিল্লার নামে চায়। ৫০ লাখ মানুষ চায়।’ জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই নামে অন্য জেলাগুলো আসতে চায় না। আমরা চেষ্টা করেছি তো। নোয়াখালী আসবে না, ফেনী আসবে না, লক্ষ্মীপুর আসবে না, চাঁদপুর আসবে না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসবে না।’ বাহার উদ্দিন বলেন, ‘কেন আসবে না আপা? আপনি কি সিলেটকে জিজ্ঞাসা করে দিয়েছেন দিছেন আপা? হবিগঞ্জ আসবে কি না? সিলেট দিয়েছেন সবাই আসছে।’

শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে বলেন, ‘হ্যাঁ জিজ্ঞেস করেছি। তুমি সবার কাছে লেখায়ে আনো।’ বাহার উদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপনি দিলেই মানবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আচ্ছা তোমারে দায়িত্ব দিলাম, সবার কাছে মানায় নিয়ে আসো, যাও।’ বাহার বলেন, ‘আপা আপনি দিলে মানবে। আপনি মুখ দিয়ে বললেই সব হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমিতো পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নাম দিয়ে দিচ্ছি। যে স্লোগান তুমি ছাত্রজীবনে দিয়েছ।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাস্যরস করে বলেন, ‘তাহলে তুমি থাকো। তোমার বিভাগ হবে না। যদি বিভাগ চাও আমি মেঘনা নামে করে দিতে পারি। মেঘনাটা পার হয়েই তো চলে যেতে হয় কুমিল্লায়। আর পদ্মা পার হয়ে যাব ফরিদপুর।’

এসময় বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লার অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লার আসল নাম ছিল ত্রিপুরা। এটা ভুলে যেও না এখনো পুরনো কাগজে ত্রিপুরা লেখা আছে। পুরনো দলিলের ত্রিপুরা লেখা আছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে আমার প্রস্তাব রাখলাম। যদি পছন্দ হয় ভালো, না হলে হবে না। আমাদের দুইটা বড় নদী। নদীর নামটা আমি সম্মান দিয়ে রাখতে চাই। যে স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি সেই শ্লোগান দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগ অফিসটা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করে দিয়েছি। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার জন্যই এই করোনা থাকার পরও উন্নয়নের ধারাটা রাখতে পেরেছি। বাংলাদেশ কেউ দরিদ্র থাকবে না। বাংলাদেশ হবে একটা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। এই কথা বলে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমার প্রস্তাবটা গ্রহণ করার আবেদন জানাই।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ইসলাম আমাদের শেখায় মানবধর্মকে সম্মান করা। নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সবার আছে। অন্যের ধর্মকে কেউ হেয় করতে পারে না। নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্যের ধর্মকে হেয় করলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়। কুমিল্লার ঘটনাটা যদি বিশ্লেষণ করি সেটাই দেখতে পাই। আমাদের পবিত্র কোরআনকে অবমাননা করা হয়েছে অন্যের ধর্মকে অসম্মান করতে গিয়ে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুঃখজনক। নিজের ধর্মের সম্মান নিজেকেই রক্ষা করতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। কেউ যদি অপরাধ করে, সেই যে-ই হোক না কেন বিচার করা হবে। আমাদের সরকার সেই বিচার করবে।’ বাংলাদেশে আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক সমাজে বসবাস করি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে সব ধর্মের সঙ্গে আমাদের সম্প্রীতি থাকবে। সম্প্রীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। যুগ যুগ ধরে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে আসছি।’

মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ জীবন দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন, তারা কিন্তু কোনো ধর্ম দেখেননি। তারা রক্ত দিয়েছেন, সেটা সব ধর্মের জন্য। সব ধর্মের রক্ত একাকার হয়ে মিশে গেছে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। এখানে সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি পেশার মানুষ মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে চলবে।’

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

পদ্মা প্রধানমন্ত্রী বিভাগ মেঘনা শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর