যশোরে স্থানীয় ৮ জনের শরীরে ভারতীয় ধরণ শনাক্ত
৩১ মে ২০২১ ২৩:৫৩ | আপডেট: ৩১ মে ২০২১ ২৩:৫৫
যশোর: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে সিকোয়েন্সিং করে যশোরের স্থানীয় আটজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরণ পাওয়া গেছে। শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে কারোরই ভারতে যাওয়ার কোনো ইতিহাস নেই। আক্রান্ত ওই আটজনের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের সবার বয়স ৫৬ বছরের নিচে।
যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে সোমবার (৩১ মে) জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বে একদল গবেষক সিকুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরণ শনাক্ত করেন। ইতোমধ্যে ভারতীয় ধরণ শনাক্তের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর এবং যশোরের স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
জিনোম সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৯ মে চারজনের নমুনা অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিনজনের নমুনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং অপরজনের নমুনা ঝিকারগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যবিপ্রবির ল্যাবে পাঠানো হয়। সম্প্রতি ভারত ফেরত কোয়ারেনটাইনে থাকা পরবর্তী সময়ে করোনা পজিটিভ হওয়ার হার যশোর জেলায় গড়ে ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে উন্নীত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সংক্রমণ হয়েছে কি না সেটি জানার জন্য স্থানীয় ৩৬ জনের নমুনা সিকোয়েন্সিং করে আটজনের শরীরে ভারতীয় ধরণ শনাক্ত করা হয়।
যবিপ্রবির গবেষক দলটি জানান, B1.617.2 নামের ধরণটি জিনোম সেন্টারে শনাক্ত করা হয়েছে। গত ৮ মে যবিপ্রবির ল্যাবে সর্বপ্রথম দুজন করোনা রোগীর নমুনায় ভারতীয় এ ধরণ শনাক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত ভারত ফেরত ৫৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। আক্রান্তদের মধ্যে সাতজনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়ান্ট B1.617.2 পাওয়া যায়। এদের মধ্যে দুজন করোনা পজিটিভ হয়েই দেশে আসেন। কেউ কেউ উপসর্গহীন অবস্থায়ও পজিটিভ হন। যবিপ্রবির ল্যাবে এ পর্যন্ত ভারত ফেরত ও স্থানীয়সহ ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরণ শনাক্ত করা হলো।
গবেষক দলটি জানিয়েছে, গত ২০ ডিসেম্বর এ ধরণটি সর্বপ্রথম ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত এ ধরণটি বিশ্বের ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিসহ সব ভারতীয় ধরণকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় এ ধরণটি যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভারতের একটি হাসপাতালে এই ধরণটির ৪৮ ভাগ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে। অ্যাস্ট্রোজেনেকা ভ্যাকসিন এই ধরণটির ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ কার্যকর। তাদের মতে, ভারতীয় এ ধরণটি ৫০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সিরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরণকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে। সুতরাং মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এছাড়া সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অধিবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার সুপারিশ করছে গবেষক দলটি।
গবেষক দলটি ভারত থেকে আগত সবাইকে করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে রেখে পরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ধরণ শনাক্ত হওয়ায় সীমানা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো কারণে চালক ও সহকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর এপ্রিল হতে করোনা পরীক্ষা করছে। তার পাশাপাশি করোনার ভ্যারিয়েন্ট নিয়েও কাজ করছে। ভারতীয় নমুনায় পজিটিভ হওয়া মাত্র তার প্রথমে স্যাংগার সিকুয়েন্সিং করা হয়। সেখানে প্রাথমিক ধারণা পেলেই সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়। তারপর হোল জিনোম সিকোয়েন্সিং করে করোনার ধরণ শনাক্ত করা হয়।
জিনোম সেন্টারে ভারতীয় ধরণ শনাক্তকরণের গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ড. তানভীর ইসলাম, ড. হাসান মোহাম্মদ আল-ইমরান, অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এ. এস. এম. রুবাইয়াত-উল-আলম, মো. সাজিদ হাসান প্রমুখ।
সারাবাংলা/পিটিএম