গ্রাহকের অজান্তে টাকা কাটা, অনুসন্ধানে বিটিআরসি
২১ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৫৭ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৫৭
ঢাকা: টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (টি-ভ্যাস) সেবা সম্পর্কে গ্রাহকদের পাওয়া অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গ্রাহকের অজান্তে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে ১১টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে তিন প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে কমিশন। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিগগিরই অপরাধী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিটিআরসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র সারাবাংলাকে বলেন, ‘টিভ্যাস সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে একটি কমিটি কাজ করছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। আপাতত টিভ্যাস প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপির মাধ্যমে গ্রাহক ওই সেবা নিতে চায় কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। তারপরই ওই সেবা দেওয়া যাবে।’
এর আগে, টি-ভ্যাস নিয়ে ভবিষ্যতে অপারেটরদেরকে আর সুযোগ দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। দায়িত্ব নেওয়ার পর সারাবাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছিলেন। তার আগে গ্রাহকের অজান্তে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগে রবি ও বাংলালিংককে টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (টি-ভ্যাস) বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সংস্থাটি। পরে বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অপারেটর দু’টি। সাক্ষাতের পর অপারেটর দু’টির ভ্যাস সার্ভিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরেও আসে বিটিআরসি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ‘ভ্যাস সার্ভিস নিয়ে আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা সেগুলো আমলে নিয়েছি। মোবাইল অপারেটরদের শোকজ করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার তাদের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই মর্মে ছাড়া হয়েছে যে এই রকম ভুল যদি আবার হয়, তাহলে আমরা খুব সিরিয়াস অ্যাকশনে যাব। আর আমি যোগ দেওয়ার পরে যেহেতু এটি প্রথম উদ্যোগ ছিল, তাই বলেছি— এবারই আপনাদের সুযোগ দেওয়া হলো। কিন্তু ভবিষ্যতে আর কোনো সুযোগ নয়।’
টিভ্যাস নিয়ে গেল বছরের শেষ দিকের এই আলোচনা আবারও সামনে আসে চলতি বছরের এপ্রিলে। বিটিআরসি জানিয়েছে, সম্প্রতি টিভ্যাস সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রাহক পর্যায়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে গ্রাহকের অজান্তে টিভ্যাস সার্ভিস এক্টিভেট করে টাকা কেটে নেওয়া ও অপ্রয়োজনীয় সেবা চালু করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
পরে বিটিআরসির প্রাপ্য রাজস্ব পরিশোধ না করাসহ গ্রাহকস্বার্থ বিবেচনায় বিটিআরসি টিভ্যাস রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটধারী প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন শুরু করে। এরইমধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু অনিয়মও পায় তারা।
এসবের মধ্যে রয়েছে গ্রাহকের অজান্তে টিভ্যাস সার্ভিস এক্টিভেট করে টাকা কেটে নেওয়া, গ্রাহকদের সম্মতি ব্যতিরেকে অটো রিনিউওয়াল চালু রাখা, টিভ্যাস গাইডলাইন প্রণয়নের পূর্ব থেকে কমিশনের প্রাপ্য রাজস্ব দেয়া, নিবন্ধিত ঠিকানায় অফিস না থাকা, কমিশন হতে সার্ভিস এবং ট্যারিফ অ্যাপ্রুভাল ছাড়া টিভাস সেবা দেয়া, নিজস্ব মনিটিরিং টার্মিনাল বা অনলাইন মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, অবকাঠামো শেয়ার চুক্তি ছাড়া সার্ভার স্থাপন করা, অডিট রিপোর্ট প্রদান করতে না পারা এবং টিভ্যাস এক্টিভেশনের ক্ষেত্রে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি বাস্তবায়ন না করা।
জানা গেছে, উইন মিয়াকি লিমিটেড, মিয়াকি মিডিয়া লিমিটেড ও বিনবিট মোবাইল এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসনিক জরিমানা এবং বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে বিটিআরসি। পরিদর্শন করা ওই ১১টি প্রতিষ্ঠানের নাম বিটিআরসি না জানালেও অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে- এসএসডি টেক, পার্পল ডিজিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, দ্য অভি কথাচিত্র লিমিটেড, জয়কলস বাংলাদেশ লিমিটেড, ফোর ডিএল বাংলাদেশ লিমিটেড, গ্যাক মিডিয়া লিমিটেড, আজরা টেকনোলজিস লিমিটেড ও বিটুএম টেকনোলজিস লিমিটেড নামের এই ৮ টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিটিআরসির তদন্ত চলছে।
এসব প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহকদের সমসাময়িক নিউজ অ্যালার্ট, ওয়েলকাম টিউন, গান, ওয়ালপেপার, ভিডিও, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য, লাইফস্টাইল, মোবাইল গেম, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকে। এসব সেবাকে টেলিকমিউনিকেশন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস বা টিভ্যাস হিসেবে বলা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে ২০১০ সালের দিকে স্বল্প পরিসরে টিভ্যাস সেবা প্রদান শুরু হয়। কিন্তু ২০১৮ সাল নাগাদ এর ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিটিআরসি হতে টিভ্যাস রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য গাইডলাইন করে দেয়া হয় এবং সে সময় হতে টিভ্যাস রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদান শুরু করা হয়।
বর্তমানে বিটিআরসির অনুমোদিত টিভ্যাস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান ১৮২ টি।টিভ্যাস প্রোভাইডাররা চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের সাথে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের শর্টকোড, এসএমএস, আইভিআর, ওয়াপ, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিভ্যাস সেবা দিয়ে থাকে। সেবার বিনিময়ে গ্রাহকদের নিকট থেকে প্রাপ্য অর্থের একটা অংশ সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক মুঠোফোন অপারেটররা পেয়ে থাকে।
টিভ্যাস প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অর্জিত রাজস্বের মোট ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বিটিআরসি পেয়ে থাকে। বিটিআরসির প্রাপ্য রাজস্ব পরিশোধ না করাসহ গ্রাহকস্বার্থ বিবেচনায় টিভ্যাস রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটধারী প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন শুরু করে বিটিআরসি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিটিআরসির অনুসন্ধানও চলছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে