সাংবাদিক হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের পক্ষে নন তথ্যমন্ত্রী
২ এপ্রিল ২০২১ ২১:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মূলধারার সাংবাদিক সংগঠনগুলোর দাবি থাকলেও সংবাদকর্মীদের ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ নির্ধারণ করে দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা অডিটোরিয়ামে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত ‘সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার সমাপণী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী একথা জানান। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলার সাংবাদিকদের জন্য এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে যাই, তখন অনেকে সাংবাদিকতায় প্রবেশের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি করেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এর বিপক্ষে। কারণ পৃথিবীতে বহু মানুষ আছে, যাদের কোন ডিগ্রি ছিল না, কিন্তু তারা অনেক জ্ঞানী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম মেট্রিক পাসও করেননি। বিলগেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনবার ফেল করে আউট হয়ে যান। কিন্তু তাদের জ্ঞান পৃথিবীকে আলোকিত করেছে। তাদের জ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা যায়।’
‘অনেক সাংবাদিক আছেন, যিনি মাত্র মেট্রিক পাস, কিন্তু তিনি অনেক ভাল লেখেন। আবার অনেক সাংবাদিক আছেন, যিনি মাস্টার্স পাস করেও ভাল রিপোর্ট লিখতে পারেন না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে ডিগ্রি নির্ধারণের বিপক্ষে। সাংবাদিক নেতারা আমাকে বলেন যে- সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে একটি স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যাতে যে কেউ সাংবাদিকতায় ঢুকে যেতে না পারে। একটা অনলাইন পোর্টাল খুলেই অনেকে নিজেকে সাংবাদিক দাবি করেন। তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু সাংবাদিকতা নয়, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়, এটি অনেকের কাছে একটি ব্রত। বহু সাংবাদিক আছেন যারা সরকারি চাকরি করলে সচিব হয়ে অবসরে যেতে পারতেন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ভাল ছেলেরা সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করে সাংবাদিকতাকে ভালবেসে এই পেশায় আসে। সাংবাদিকতার নামে দুয়েকজন অপসাংবাদিকের ব্যক্তিগত দুর্নাম যাতে সামগ্রিক সাংবাদিক সমাজকে কলংকিত করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে।’
‘সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের ও সমাজের দর্পন হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি আমরা যাতে উন্নত সমাজ গঠন করতে পারি, সেটির ব্যাপারেও লিখতে হবে ৷ একইসাথে যে কথা বলতে পারে না, যার ভাষা হারিয়ে গেছে তার জন্যও লিখতে হবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকের পৃথিবীটা এমন হয়ে গেছে মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মানুষ এখন অন্যকে নিয়ে ভাবে না। এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়েও ভাবে না। মানুষ শুধু ছুটে চলছে, কার আগে কে যাবে। কাকে টপকিয়ে, ল্যাং মেরে উপরে যাবে সেটা নিয়েই ছুটে চলে। এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা।’
পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে ও রাঙ্গুনিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিগারুল ইসলাম জিগারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল, চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টিয়ান ও কুষ্ঠ হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং।
সারাবাংলা/আরডি/এমও