সেদিন প্রকৃতির নিয়মে সূর্য উঠেছিল, সে সূর্যের নাম শেখ মুজিব
১৭ মার্চ ২০২১ ১৯:৫৬ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১ ০০:১৪
ঢাকা: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, পৃথিবী আলোকিত করার জন্য প্রকৃতির নিয়মে পূবাকাশে সূর্য উঠেছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। সেদিন বাঙালি জাতির জন্য সোনালি আভা নিয়ে আরেকটি সূর্য উঠেছিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়, সে সূর্যের নাম শেখ মুজিবুর রহমান।
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে মুজিব চিরন্তন প্রতিপাদ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রথমদিনের ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ দিয়ে শুরু হল ১০ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা।
করোনাভাইরাস মহামারীর সংক্রমণ পরিস্থিতিতে থমকে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন। জনসমাগম এড়িয়ে সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে গত এক বছর ধরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ ছিল। মুজিববর্ষে জাতির পিতার ১০১তম জন্মবার্ষিকীকে উদযাপন রঙে রাঙিয়ে রাখার পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আরেক মাহেন্দ্রক্ষণে জাতি।
প্রথমে শতশিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর তারা আরও সমবেত কণ্ঠে দুইটি গান পরিবেশন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথিসহ সম্মানিত আমন্ত্রিত অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহণ করার আহ্বান করেন। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। বিভিন্ন ধর্মীয়গ্রন্থ পাঠে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আসাদুজ্জামান নূর।
মুজিব চিরন্তন ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিমের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত অডিও-ভিজ্যুয়ালে ফুটে উঠবে জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের নানা অধ্যায়। মুজিববর্ষের ‘থিম সং’য়ের মিউজিক ভিডিও পরিবেশনার পর বিমানবাহিনীর ফ্লাই পাস্টের রেকর্ড করা ভিডিও প্রচার হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত সম্ভাষণ দেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসাবে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা’র ধারণ করা ভিডিওবার্তা প্রদর্শন করা হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক মার্ক টালির ধারণকৃত বার্তা প্রদর্শন হয়।
এর আগে, চীনের রাষ্ট্রদূত দেশটির পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে দেন, তার একটি ভিডিও প্রচার করা হয় এই অনুষ্ঠানে।
সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্’র বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথিদের ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক উপহার প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পৃথিবী আলোকিত করার জন্য প্রকৃতির নিয়মে পূবাকাশে সূর্য উঠেছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। সেদিন বাঙালি জাতির জন্য সোনালি আভা নিয়ে আরেকটি সূর্য উঠেছিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়, সে সূর্যের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। যে সূর্যের উজ্জ্বল ও প্রখর রোদ এসে বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছিল একটি জাতিরাষ্ট্র, লাল-সবুজের একটি পতাকা ও একটি জাতীয় সংগীত। সাথে বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার ঠাঁই করে দিয়েছিল বাঙালিকে, এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের নতুন ঠিকানা- বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের মহানায়ক।’
‘আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি ও রূপকার। ইতিহাসের স্বর্ণশিখরে পোঁছাতে বঙ্গবন্ধুকে অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা, অত্যাচার-নির্যাতন ও জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। কোনো জাদুমন্ত্র বা মুরব্বির ছোয়ায় তিনি ইতিহাসে স্থান পাননি। স্কুলজীবন থেকেই তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন, নিজের বই-খাতা, জামা কাপড়, ছাতা বিলিয়ে দিয়ে শুরু করেছেন আর নিজের জীবন দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন।’
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বা ভোগ-বিলাস কোনো কিছুই তাকে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু চাইলেই বিত্ত-বৈভবে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি অবলীলায় এ সব প্রত্যাখ্যান করে দেশ ও জনগণের অর্থাৎ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বার্থকেই জীবনের ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। পাকিস্তান জেলে থাকাকালীন ১৯৭১ সালের ১১ই নভেম্বর সকাল আটটায় বঙ্গবন্ধুকে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল আকবরের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়ার ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধু তার কাছে এসে প্রাণের ভয়ে নরম হয়ে যাবেন এবং সেই সুযোগে তার কাছ থেকে আপসের প্রস্তাব পাওয়া যাবে। তিনি এই মানসে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর দিকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, দুঃখিত, ও হাতে বাঙালির রক্ত লেগে আছে, ও হাত আমি স্পর্শ করতে পারব না।
মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে একমাত্র একজন মহানায়কই এমন সাহসী উক্তি উচ্চারণ করতে পারেন। নিজের দেশকে ও নিজের মানুষদেরকে ব্যক্তি ও পরিবারের চেয়ে বেশি ভালোবাসলেই মৃত্যুকে জয় করে স্বাধীনতা ও মুক্তির গান গাওয়া যায়।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ ও অসীম সাহসিকতার কথা সুবিদিত হয়ে থাকবে। জাতির পিতার আহ্বানে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তার সহকর্মী ছিলেন, তাকে সরাসরি দেখা ও জানার সুযোগ পেয়েছেন তারা অধিকাংশই আজ বেঁচে নেই। যারা জীবিত আছেন সকলেই আজ জীবনসায়াহ্নে।’
তাই শতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে জাতির পিতার অমূল্য স্মৃতি ও স্মারক সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম বাঙালি জাতির গৌরব এবং পূর্বসূরীদের অসীম সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের অনন্য গাথা জানতে পারে এবং সেই আলোকে নিজেদের আলোকিত করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নিমার্ণাধীন পদ্মাসেতু এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। বাস্তবায়িত হচ্ছে মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বহু মেগা প্রকল্প। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।’
সারাবাংলা/এনআর/একে
টপ নিউজ বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকী মুজিব শতবর্ষ