Friday 19 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশ ২৫ মার্চ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ মার্চ ২০২১ ২০:০৮

ঢাকা: ১৯৭১ সাল। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনই বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা দেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং উল্লেখযোগ্য পেশাজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতার পর থেকে তাদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। কিন্তু দিবস থাকলেও বাংলাদেশে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রীয় তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

১৯৭২ সালে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হলেও সেই তালিকা কখনও গেজেটভুক্ত হয়নি। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদদের মধ্যে কতজন বুদ্ধিজীবী ছিলেন, তার সঠিক তালিকা গত ৫০ বছরে কোনো সরকারই করতে পারেনি। এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। সেজন্য ১ হাজার ২২২ জনের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আসছে ২৫ মার্চ সেই তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গবেষক এবং এ সংক্রান্ত বই থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ১৯৭২ সালে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৭০ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা করেছিল তৎকালীন সরকার। পরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ১৫২ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর নামে ডাকটিকেট প্রকাশ করে। সরকার শহিদ বুদ্ধিজীবীদের যে তালিকা এখন তৈরি করছে তা এই দুই হিসাবের ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে। এর বাইরে বাংলা একাডেমি প্রণিত শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষ গবেষণা গ্রন্থের বুদ্ধিজীবীদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জানা যায়, শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের পাশাপাশি দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের বিভিন্ন সময়ে করা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এই তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে সরকার।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের কোনো সংজ্ঞা ছিল না। এখন সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়েছে। সেজন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। অনেক আবেদন আসছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। যুদ্ধে ত্রিশ লাখ লোক শহিদ হয়েছে। কারা বুদ্ধিজীবী হিসেবে কী ভূমিকা রেখেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে কাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান কতটুকু— এসব মূল্যায়ন করে তালিকা করা হবে। কোনোকিছু ঢালাওভাবে করা যাবে না। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা হবে। আর তাদের শহিদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।’

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির জন্য গত বছরের নভেম্বরে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। ওই কমিটির সদস্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৭২ সালের তৈরি করা তালিকা, ডাক মন্ত্রণালয় থেকে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নামে বের করা ডাকটিকিট এবং বাংলা একাডেমির গবেষণা কোষ থেকে নতুন নাম যুক্ত করে প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সরকারিভাবে যাদের সম্মাননা বা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তালিকায় কেবল সেই নামগুলোই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই তালিকাও সম্পূর্ণ নয়। আমরা ঠিক করেছি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যাতে একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা যায়।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেক তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক পরিবারের স্বজনরাও বেঁচে নেই। এই পরিস্থিতিতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি সহজ কাজ নয়। আমরা সেই দুরূহ কাজটিই করার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তালিকাটি কয়েক খণ্ডে প্রকাশ করব। প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২২২ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেটা ২৫ মার্চ প্রকাশ করা হবে।’

এর আগে শহিদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা নির্ধারণে বাংলা একাডেমি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি কয়েকটি পেশা উল্লেখ করে সংজ্ঞায় বলেছে, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারাই বুদ্ধিজীবী। বাংলা একাডেমির বিশেষজ্ঞ টিমের দেওয়া এই সংজ্ঞা সামনে রেখে তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

শহর-গ্রাম সব জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজে প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। এরপর সরকারি কমিটি সেসব নাম যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করবে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

আরো