বিএনপি ও আ.লীগ গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পড়িয়েছে: জি এম কাদের
১ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:৫৫
ঢাকা: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতি চালু করেছে। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করে তারা ৭০ ধারা যোগ করেছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যে দল সরকার গঠন করে সেই দলের প্রধানই হন সংসদীয় দলের প্রধান এবং সরকার প্রধান। আর ৭০ ধারার কারণে কোন সংসদ সদস্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না। তাই সরকারদলীয় প্রধান যা চান তাই সংসদে পাস হয়। আবার সরকার প্রধান যা চাননা তা সংসদে পাশ হয়না। এতে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে এবং সরকারের জবাবদিহিতা থাকেনা। নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতায় দুর্নীতি বেড়ে যায়।’
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট ৫ বার বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাাম্পিয়ন হয়েছিলো উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গেলো ৩০ বছর ধরে ৭০ ধারা অপব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা ভোগ করেছে। সংসদ যেখানে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে সেখানে সরকারই সংসদকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কোন পথ আর নেই। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুর্নীতি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।’
‘জাতীয় পার্টির শাসনামলে দুর্নীতি ছিলোনা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিলো না, ক্ষমতার অপব্যবহার ছিলো না। গেলো ত্রিশ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের চেয়ে জাতীয় পার্টির শাসনামলে বেশি সুশাসন ছিলো। জাতীয় পার্টির আমলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিলো। তাই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারে। দেশের মানুষের কাছে গর্বভরে জাতীয় পার্টির প্রতি আহ্বান জানাতে পারে’, বলেন তিনি।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘বিএনপি এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ডাক-চিৎকার করছে। কিন্তু বিএনপি কি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়েছে কখনো? বিএনপি ও আওয়ামী লীগ-এর মহাসচিবরা প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে বাহাস করছেন। কিন্তু তারা সবাই গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পড়িয়ে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক স্বাদ নষ্ট করেছে।’
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘গেলো ১০ থেকে ১২ বছরের যে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে তার কৃতিত্ব ধরে রাখা যাবে না যদি প্রকৃত গণতন্ত্র না থাকে। এখন নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ সবাই জানে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির শাসনামলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিলো না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উন্নয়নের যে ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে সেই ভিত্তির ওপরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।’
জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো গণতন্ত্রের জন্য, বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য। উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে, তারা পরিবর্তন চায়। তারা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির শাসনামল ফিরে পেতে চায়।’
একই মিলনায়তনে সন্ধ্যায় জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্যরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদেরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেন সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এস এম ফয়সল চিশতী, জাতীয় মোটর শ্রমিক পার্টির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মীর সামছুল আলম লিপটন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভূঁইয়াসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগ গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টি টপ নিউজ বিএনপি হাতকড়া