Saturday 20 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ৯৪ হাজার শিশু পাচ্ছে মাতৃভাষায় বই


২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:১০ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৫১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৌলভীবাজার: চাকমা, মারমা, খাসিয়া, গারো, ত্রিপুরা, মুন্ডা, সাঁওতাল, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, মৈতৈ মণিপুরীসহ বেশকিছু ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে এসব জনগোষ্ঠীর শিশু শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষায় লেখা বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। তবে ২০১৬ সাল থেকে কিছু কিছু নৃগোষ্ঠীর জন্য মাতৃভাষায় বই প্রণয়ন করে বিতরণ শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ বছরও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের মাতৃভাষায় লেখা বই বিতরণ করা হবে। নতুন বছরের শুরুতেই পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৯৪ হাজারেরও বেশি শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হবে এসব বই।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্র বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসেই অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চাকমা, মারমা, সাদ্রী, ত্রিপুরা ও গারো— এই পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৯৪ হাজার ২৭৫ শিশু তাদের মাতৃভাষায় লেখা ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮টি বই পাবে। তবে এই সুবিধাটি পাবে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এই তিনটি শ্রেণির সবগুলো বই থাকছে চাকমা, মারমা, সাদ্রী, ত্রিপুরা ও গারো ভাষায়। আর তৃতীয় শ্রেণির কেবল বাংলা বইটি হবে এই পাঁচটি ভাষায়। এর সঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে ব্রেইল বইও।

এনসিটিবি বলছে, তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বাদ দিয়ে বাকি বইগুলোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশু শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষায় যুক্ত করা হবে। আর চলতি বছর সাঁওতাল ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, চলতি বছর সারাদেশে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা তাদের মাতৃভাষায় লেখা বই পাবে দুই লাখেরও বেশি।

সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় বই প্রণয়ন বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর শিশুদের এ বছর থেকে পাঠ্যবই দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যেই মাতৃভাষায় বই প্রণয়নের ক্ষেত্রে বর্ণমালা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কোন অক্ষরে বই লিপিবদ্ধ হবে, তা নিয়ে তারা নিজেরাই দ্বিধাবিভক্ত। এ কারণে এ বছর সাঁওতাল শিশুদের নিজ ভাষায় বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এনসিটিবি বলছে, এরই মধ্যে প্রাথমিকের প্রায় শতভাগ ও মাধ্যমিক স্তরের ৭৫ শতাংশ বই জেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব জেলাতেই শতভাগ বই পৌঁছে যাবে।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় বই বিতরণের খবরে উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। বাংলাদেশ ত্রিপুরা সংসদ আঞ্চলিক কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দেব বর্মা সারাবাংলাকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের ভাষা সংরক্ষণ করে পাঠপুস্তক প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। আমাদের দাবি পূরণ করায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ও বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সহসভাপতি জিডিশন প্রধান সুচিয়াং সারাবাংলাকে জানান, আমাদের সন্তানেরা মাতৃভাষায় পড়ালেখা করবে— এ আনন্দের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা আদিবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে সরকারপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বাংলা ভাষায় পড়তে পারলে যেমন সহজে সবকিছু রপ্ত করতে পারি, তেমনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরাও তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পেলে সহজে এগিয়ে যেতে পারবে। সরকার সেই সুযোগ করে দিতে যথেষ্ট আন্তরিক।

আরও পড়ুন-

মাতৃভাষায় বই পেল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীরা

হারিয়ে যাচ্ছে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা

তৃতীয় শ্রেণিতেও মাতৃভাষায় বই পাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা

নানা প্রতিবন্ধকতায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম

বিজ্ঞাপন

আরো