Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৮ ডিসেম্বর ১৯৭১— স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন


৮ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:৪৯ | আপডেট: ৮ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৪২

ঢাকা: সম্মিলিত বাহিনী চারদিক থেকে এগিয়ে চলছে। রণপদ্ধতিতে ব্যাপক সুফল পেতে থাকে মিত্র বাহিনী। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ বিভিন্ন ভাষায় হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান লিফলেট করে আকাশ থেকে ছড়িয়ে দেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এ আশ্বাস দেন যে, আত্মসমর্পণ করলে তাদের প্রতি জেনেভা কনভেনশনের রীতি অনুযায়ী সম্মানজনক ব্যবহার করা হবে। কিন্তু পাক সামরিক শাসকরা কিছুতেই আত্মসমর্পণের দিকে না গিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাংলাদেশে অবস্থানরত সেনা সদস্যদের নির্দেশ দেয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। প্রতি ক্ষেত্রে হানাদার বাহিনীকে একের পর এক পরাজিত করতে থাকে মুক্তিবাহিনী। হানাদার বাহিনীর বিমান ঘাঁটিতে মুক্তিসেনারা আর্টিলারি আক্রমণ চালিয়ে শেষ রাতের দিকে তাদের আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হয়। রাতব্যাপী যুদ্ধে ২৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হানাদার বাহিনীর কতিপয় সেনা বিমান বন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে বরুড়ার দিকে এবং সেনানিবাসে ফিরে যায়। বিমান বন্দরের ঘাঁটিতে ধরা পড়া পাক সেনারা এদিনই আত্মসমর্পণ করে।

এদিন কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল হানাদারমুক্ত হয়। রাস্তায় নেমে আসে জনতার ঢল। কুমিল্লার আপামর জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেয়। কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনী ও জনতার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহম্মেদ বাবুল ৮ ডিসেম্বরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর শেষ রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন শর্মার বাহিনীর সঙ্গে নির্ভরপুর থেকে সোনামুড়া হয়ে রওনা হলাম কুমিল্লা শহরের উদ্দেশ্যে। ভারতের ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের অধীনস্থ ৬১ ব্রিগেড এবং আমাদের ৯ বেঙ্গল ওইদিন সারারাত যুদ্ধ করে কুমিল্লা শহরকে শত্রু মুক্ত করে সম্পূর্ণভাবে। ওই সময় ক্যাপ্টেন শর্মা ছিলেন তার আর্মি জিপে আর আমরা ছিলাম অন্য একটা গাড়িতে। ক্যাপ্টেন শর্মা আমাদের (আমি, শাহ আলম, রেজাউর রহমান বুলবুল) তার জিপে উঠিয়ে নিলেন। আমরা ছাড়াও তার সঙ্গে ছিল ড্রাইভার আর একজন ইন্ডিয়ান সৈনিক।’

‘আমরা ৬ জন উনার জিপে করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে ৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে কুমিল্লা শহরের চকবাজার পৌঁছি। সে এক অভাবনীয় অকল্পনীয় দৃশ্য, যার অনুভূতি সহজে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না কখনই’, বলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

এদিন কুমিল্লা শহরের জনসাধারণ, সিভিল প্রশাসন, সব বীর মুক্তিযোদ্ধা, মিত্র বাহিনী এবং ৯ বেঙ্গল এর অধিনায়ক মেজর (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল এবং বীর প্রতীকে ভূষিত) আইনুদ্দিন সাহেবের উপস্থিতিতে তৎকালীন পশ্চিম পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা এবং কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করেন কুমিল্লা টাউন হল ময়দানে। মুক্ত হয় কুমিল্লা।

অবরুদ্ধ পাকিস্তানি বাহিনী মিত্র বাহিনী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর