Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অধিকাংশ শ্রমিকের নেই অ্যাকাউন্ট, করোনায় বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা!


৮ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৫১ | আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০২০ ১৩:০৪

ঢাকা: ‘সোমবার (৬ এপ্রিল) কারখানা খুলেছিল। ওইদিন বিকেলেই মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। বুধবার মার্চ মাসের বেতন দেওয়ার কথা রয়েছে। আর এদিন বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দিতে বলেছে। যাদের নেই কারখানায় তাদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে। আগামী মাসে এপ্রিলের বেতন ঢুকবে বিকাশে।’- কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার এক শ্রমিক।

আর সাভারের একটি কারখানার শ্রমিক মো. কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোববার কারখানা খোলার কথা থাকলেও বিজিএমইএর আহ্বানের পর ছুটি দেওয়া হয়। পরে গ্রামের বাড়ি চলে আসি। বেতনের ব্যাপারে সেদিন কিছু জানায়নি। হয়তো ১৫ তারিখ কারখানা খুললে বেতন দেবে।’ এই দুই শ্রমিকের ভাষ্যে পোশাক কারখানা শ্রমিকদের বর্তমান চিত্র কিছুটা উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে মগবাজারের একটি কারখানার শ্রমিক কুদ্দুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘৪ তারিখ ছুটি শেষ হওয়ার আগেই আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয় কারখানা ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। সরকার নতুন করে ছুটি বাড়ানোয় আমাদের ফোনে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়। এখন ১৫ তারিখ কারখানা খোলার কথা। তবে বেতনের ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি।’

গত ৫ এপ্রিল সারাবাংলা ডটনেটে ‘রোববার খোলা ছিল ৩৯৭টি কারখানা, সোমবার খুলছে হা-মীমও!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। তার আগে শনিবার বিজিএমইএর পক্ষ থেকে কারখানা বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ওইরাতেই হা-মীম গ্রুপের কারখানাগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। পরে রোববার দুপুরে শ্রমিকদের জানানো হয় সোমবার থেকে কারখানা খুলবে। কারখানাটি সোমবার চালু থাকলেও মঙ্গলবার থেকে আবার বন্ধ রয়েছে। ৭ এপ্রিল হা-মীম গ্রুপের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ৮ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানাটিতে লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে এই লে-অফ বাড়তেও পারে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ কোনো ফ্যাক্টরি খোলা নেই। প্রায় সব ফ্যাক্টরিই বন্ধ। দুয়েকটা হয়তো ভেতরে ভেতরে খোলা থাকতে পারে। যারা পিপিই ও মাস্ক বানাচ্ছে এমন দুই একটি কারখানা খোলা আছে।’

তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএর পক্ষ থেকে মার্চ মাসের বেতন ১৫ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। ধাপে ধাপে অনেক ফ্যাক্টরিই বেতন দিয়ে দেবে। ৮ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে অনেক ফ্যাক্টরি বেতন দেবে। আশুলিয়ায় ৯ তারিখ বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু অনেক শ্রমিকেরই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। আবার এপ্রিলের বেতন দিতে শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট লাগবে। সবমিলিয়ে শ্রমিকদের বেতন প্রাপ্তিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

শ্রমিকদের জন্য অন্তত তিন মাসের রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়ে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘শ্রমিকদের এখন খাদ্য দরকার। তাদের সময় মতো যেন বেতন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কোনো মালিক গড়িমসি করলে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। হয়তো কারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তাদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা উচিত। যেখানে সরকার ও মালিক পক্ষ উভয়ের কন্ট্রিবিউশন থাকবে। কারণ শ্রমিকরা যদি দুর্বল হয়ে পড়ে ভবিষ্যতে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাবে।

সম্মিলতি গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি নাজমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকরা এখনও বেতন পায়নি। বিজিএমইএ থেকে বলা হয়েছে, যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তাদের কাল-পরশুর মধ্যে বেতন দেওয়া হবে। যাদের অ্যাকাউন্ট নেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি। সারাদেশে এখনও বেশ কিছু কারখানা খোলা আছে। সংখ্যাটি ১০০ এর মতো হতে পারে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা শ্রমিকরা এখনও বেতন পায়নি। আরেকটি মারাত্মক বিপর্যয়ের ঘটনা শ্রমিকদের ৪ এপ্রিল আসতে বাধ্য করা। তারা ১০০ টাকার ভাড়ার জায়গায় ৫০০ টাকা খরচ করেও এসেছে। কিছু কিছু কারখানায় শ্রমিকরা আজও বেতনের জন্যে ভিড় করছে। নামমাত্র কিছু ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। কিছু ফ্যাক্টরি হয়তো অল্প সময়ে করতেও পারবে। অর্থাৎ মার্চ ও চলতি মাসের বেতন পাওয়া নিয়েই শ্রমিকদের এখন বড় শঙ্কায়। এছাড়া করোনার সময়ে কিছু কিছু কারখানায় চাকরিচুত্যির ঘটনাও ঘটেছে, যা মোটেও কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি।’

জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছু ফ্যাক্টরি খোলা আছে। তারা বেতন দিচ্ছে। আবার কারও জরুরি শিপমেন্ট চলছে। তবে বেশিরভাগ কারখানাই বন্ধ।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যে যেভাবে পারছে বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছে। বেতন নিতে হলে তো শ্রমিকদের কারখানায় আসতে হবে। অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। এখন আবার আগামী মাসের বেতন দেওয়ার জন্যে মোবাইল ব্যাংকিং বাধ্যতামূলক করেছে। এই সময়ে এটা একেবারেই অসম্ভব। অনেক শ্রমিকের এনআইডি নেই। জন্ম নিবন্ধনও নেই অনেকের। এতগুলো অ্যাকাউন্ট এই অল্প সময়ে করা অসম্ভব। এই শর্ত জুড়ে দেওয়ায় অনেক শ্রমিকই হয়তো তাদের বেতন থেকে বঞ্চিত হবে। আবার পাড়া মহল্লার দোকানও বন্ধ রয়েছে। মহামারি চলতে থাকলে তারা তো টাকাও উঠাতে পারবে না। সরকারকে আমরা এই শর্ত জুড়ে না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। তারা শোনেননি। এখন হয়তো অনেক শ্রমিকই বিপদে পড়বে।’

বিজিএমইএর পরিচালক রেজওয়ান সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ ২০ থেকে ২৫ টির মতো কারখানা খোলা রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি শ্রমিকদের দ্রুত সময়ে বেতন দিয়ে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু আমরা সদস্যদের চাপ দিতে পারছি না। কারণ তখন তারা বলছে, আপনারা অফিস বন্ধ করতে বলেছেন, কর্মচারীরা ব্যাংকে যেতে পারছে না। আবার কারখানাও বন্ধ। সব মিলিয়ে বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে সদস্যরা কিছুটা ঝামেলায় পড়েছেন।’

আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোশাক মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। সোমবার (৬ এপ্রিল) দুই সংগঠনের সভাপতি রুবানা হক ও একেএম সেলিম ওসমানের এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। সেইসঙ্গে মার্চ মাসের বেতন ১৬ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

এদিকে বিজিএমইএর একটি সূত্রে জানা গেছে, ১০ এপ্রিলের মধ্যেই বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত বেশিরভাগ কারখানায় বেতন হয়ে যাবে। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নেওয়া হলেও ১২ এপ্রিলের মধ্যেই মার্চ মাসের বেতন দেওয়ার লক্ষ্য বিজিএমইএর। বর্তমানে বড় বড় কারখানার শ্রমিকদের ৮০ ভাগের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বাকি শ্রমিকদের জন্য দ্রুত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট করতে মঙ্গলবার বিকাশ ও রকেটের সঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকের বৈঠক হয়েছে। যেসব শ্রমিক গ্রামে চলে গেছে তাদের মার্চ মাসের বেতন মোবাইলে ব্যাংকিংয়েও পরিশোধ করতে কাজ করছে সংগঠনটি। এছাড়াও প্রণোদনার টাকায় শ্রমিকদের বেতন দিতে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন, সেই কাজটিও এগিয়ে নিচ্ছে বিজিএমইএ।

অ্যাকাউন্ট পোশাক শ্রমিক প্রণোদনা বিকাশ বিকেএমইএ বিজিএমইএ বেতন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর