কার সুপারিশে মনোনয়ন পেলেন বিতর্কিতরা?— প্রশ্ন নাছিরের
২ মার্চ ২০২০ ১৬:৫৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিতর্কিত কয়েকজনকে দলের সমর্থন দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। কার সুপারিশে বিতর্কিতরা মনোনয়ন পেলেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন নাছির।
সোমবার (২ মার্চ) দুপুরে যুবলীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে নাছির এসব কথা বলেন। নগরীর জামালখানে একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
মিডিয়াকে সাক্ষী মেনে মেয়র নাছির বলেন, ‘আমার কাছে প্রশ্ন করেছেন অনেকে। আমাদের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছেও প্রশ্ন করেছেন যে- এই প্রার্থীগুলো কিভাবে মনোনয়ন পেল? আসলে তো আমরা কোনো কিছু জানি না। এই কাউন্সিলর প্রার্থীকে কারা মনোনয়ন দিয়েছেন, এটা কি আমরা জানি? আমাদের জানামতে চট্টগ্রামের কেউ এই মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত নন।’
‘আজকে তাহলে যারা এদের রেকমেন্ডেশন করেছে, তারা কারা? তারা কী জেনেশুনে করেছে? তারা জেনেশুনে করেননি। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা এ কাজগুলো করেছেন। তারা যে কাজ করেছেন এর দ্বারা কি সংগঠনের কল্যাণ হবে? মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে? এই এই জনপ্রতিনিধিগুলো মানুষের কি কোনো কল্যাণ করতে পারবে? তারা তো জনপ্রতিনিধি হতে যাচ্ছেন, বিগত দিনে তাদের কী কর্মকাণ্ড ছিল? এখনো তারা তো বিতর্কিত। তাহলে তারা কিভাবে মনোনয়ন পেলেন?’
এই বক্তব্য দিয়ে মেয়র নাছির আবার বলেন, ‘আমি এই কথাগুলো বলতে চাই না। আমি যদি কথা বলি, এই কথার সূত্র ধরে অন্য কথা হয়তো অনেকে বলার চেষ্টা করবেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ড যে মনোনয়ন প্রদান করেছেন সেটাই আমার শিরোধার্য। এবং সেটা নিয়ে কাজ করছি, কাজ করব। কাজ করে প্রমাণ করে দেব আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শতভাগ অনুগত এবং জাতির জনকের আর্দশ অন্তরে ধারণ করি।’
নিজের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে নাছির বলেন, ‘আমি হঠাৎ চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই নাই। ১৯৬৯ সালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে আন্দোলনে শরিক হয়েছি। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পর চট্টগ্রাম কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র তখন পাঁচজনকে নিয়ে মিছিলের চেষ্টা করেছি। আমি যে আজকে বেঁচে আছি আল্লাহর রহমত, প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। অনেকবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক-রশিদকে উৎখাত করেছি, ফ্রিডম পার্টি, জামায়াত-শিবিরকে উৎখাত করেছি। আমি আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে সেগুলো হয়েছে।’
নাছির আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সমগ্র চট্টগ্রামে যখন উপজেলা নির্বাচন বানচাল করার জন্য দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রত্যেকটি প্রার্থীর বাসায় বাসায় গিয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যে হামলা করা হয়েছে, তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য সেটা আমি আ জ ম নাছির উদ্দীন, আমার নেতৃত্বে। তখন মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আমার সাথে ছিল। কেউ কী অস্বীকার করতে পারে?’
তিনি বলেন, ‘জননেত্রীর একজন কর্মী হিসেবে আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমরা যেভাবে রাজনীতি করছি তাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে উনি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন। আমরা উনার একজন কর্মী হিসেবে, সেটা অন্তরে ধারণ করি কি-না? আজ সময় এসেছে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করার।’
‘শুধু বক্তব্য দিলেই হবে না। সুন্দর কথা বললাম, হাত নাড়লাম সেটাতে দায়িত্ব শেষ নয়। অন্তরে কি ধারণ করি, বাস্তবে কি করি সেটাও কিন্তু বিষয়। সাধারণ মানুষ কিন্তু বোকা নয়। তারা জানে, তারা বোঝে, তারা দেখে। আমি যদি সুন্দর কথা বলি আর অসুন্দর কাজ যদি করি তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা কোনোভাবে আমরা অর্জন করতে পারব না। সাধারণ মানুষের মন জয় কখনো করতে পারবো না।’-যোগ করেন নাছির।
প্রতিনিধি সভায় সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘যুবলীগের পেছনে অনেকের ত্যাগ রয়েছে। অনেকের কষ্টে গড়ে তোলা এ সংগঠনের কথা আমরা ভুলে যাই। আমাদের শত্রু এখন বিরোধী সংগঠন নয়, নিজেরা নিজেদের শত্রু। যুবলীগের কর্মীদের প্রতি অনুরোধ- আপনারা আপনাদের ভাইকে শত্রু বানাবেন না, ভাইদের শত্রু ভাববেন না। আপনারা যুবলীগের মান রক্ষা করবেন। আপনাদের কারণে যেন শেখ ফজলুল হক মণির হাতে গড়া যুবলীগের মাথা হেট না হয়।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে যুবলীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান পরশ।
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় প্রতিনিধি সভার মূল কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, শেখ ফজলে নাঈম, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান প্রমুখ।