সরিষা ক্ষেতে মধুর চাক
২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:৪০ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:১২
সিরাজগঞ্জ: মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে। যেন হলুদ শাড়ি পরেছে ক্ষেত। তাই মধু চাষীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে।
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও কামারখন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ক্ষেতের পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন চাষীরা।
চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি আট থেকে ১০টি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানি মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন চাষীরা।
প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা গ্রামের মৌ-চাষী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। অন্য আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষে রাখা হয়। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। তখন জেলায় সর্বত্রই সরিষার ফুল ফোটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আকার ভেদে একটি বাক্সে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এখানে মৌ চাষের বিশেষ বাক্স কলনি রয়েছে ১০০টি। প্রতিটি কলনিতে খরচ হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। এতে প্রতি কলনিতে লাভ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। এ উপজেলায় আরও বেশ কয়কটি চাষীর দল রয়েছে। সব মিলিয়ে চাষীরা প্রতি মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ করে থাকেন।’
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, ‘সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে কৃষক যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।’