Monday 15 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্তর্জাতিক অহং-এর যুদ্ধ সিরিয়ার ঘাড়ে


২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ১৩:৪৬ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ১৩:৫৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অসিউর রহমান, ফ্রিল্যান্স লেখক

সিরিয়ার বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল একটি দেয়াল লিখন দিয়ে। পরবর্তীতে বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে তৈরি হয় ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। ইরান থেকে আসে মিলিটারি সাহায্য এবং হিজবুল্লাহ মাঠে নামে আসাদ সরকারকে রক্ষা করতে। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এরই মাঝে বিরান এলাকায় তৈরি হয় বিশ্বের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জিহাদিদের নিয়ে আইসিসের খেলাফত। তুরস্ক, আমেরিকা, সুন্নি গালফ রাষ্ট্রগুলোর পরোক্ষ সমর্থনে মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর সাথে ইরান সমর্থিত আসাদ বাহিনী এবং জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমে মার্কিন বিমান হামলায় শুরু হয় চতুর্মুখী লড়াই।

পরিস্থিতি চরম আকার ধারণের পর আসাদ- ইরানের সমর্থনে আগমন হয় রাশিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসময়ই সকলের দৃষ্টি যায় কমন এনিমি এবং আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ শক্তি আইসিসের উপর, একপর্যায়ে আইসিসের দাপট এবং অস্তিত্ব শেষও হয়ে যায়। কিন্তু এখন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শেষের পর্যায়ে আসলেও আরম্ভ হয়েছে বৈধ শক্তিগুলোর নিজেদের স্বার্থের লড়াই এবং এটাই সম্ভবত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে জটিল অধ্যায়।

বিজ্ঞাপন

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মূল সমীকরণের গ্রুপ ছিল দুইটা।

প্রথম গ্রুপ- আমেরিকা- তুরস্ক এবং কিছু সুন্নি উপসাগরীয় রাষ্ট্র। যারা বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য বিদ্রোহের সূচনা থেকে ইসলামিস্ট গ্রুপগুলোকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তা দিয়েছিল। দ্বিতীয় গ্রুপ- ইরান এবং হিজবুল্লাহ বাশার আল আসাদকে রক্ষায় এগিয়ে আসে। পরবর্তীতে আসাদের পক্ষে যোগ দেয় রাশিয়া।

এর মাঝে তুরস্ক- গালফ রাষ্ট্রসমূহ- যুক্তরাষ্ট্রের ১ম গ্রুপের অভ্যন্তরে নিজেদের মাঝে কলহ বেঁধে যায় কারণ আমেরিকা- উপসাগরীয় সিন্ডিকেট তুর্কি প্রেসিডেন্টকে সরানোর জন্য মিলিটারি ক্যু সমর্থন করে। আবার ভবিষ্যতে নিজেদের একক উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য তুরস্কের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা কুর্দি বাহিনীকেও সিরিয়ায় সহায়তা দেয় আমেরিকা। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন সিরিয়ায় ওবামা আমলের মার্কিন স্ট্র্যাটেজি বিরোধী ট্রাম্প। তাই তুরস্ক মাঝপথে প্রথম গ্রুপ ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় গ্রুপের সাথে সমঝোতার পথ অনুসরণ করে।

রাশিয়া সিরিয়ায় এসে আইসিস এবং আসাদ বিরোধী ইসলামিস্টদের উপর ব্যাপক বোমা হামলা করে। ইরান- হিজবুল্লাহ সমর্থিত বাশার আল আসাদের সিরিয় সামরিক বাহিনীও গ্রাউন্ডে ব্যাপক অগ্রসর হয়। ফলে ইরানের সৈন্য, রাশিয়ার বিমান বাহিনীর উপস্থিতির পাশাপাশি বৃহৎ প্রতিবেশী তুরস্ক ও সুপার পাওয়ার আমেরিকার আচরণ বদল এবং গালফ সমর্থিত বিদ্রোহীদের পরাজয়ে মাঠের পরিস্থিতি বদলের ফলে দ্বিতীয় গ্রুপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।

এখন মূলত সিরিয়ায় সর্ববৃহৎ শক্তি রাশিয়া, তারা চাইছে কোনোমতে আসাদের ক্ষমতা এবং নিজেদের সামরিক ঘাটির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে বের হয়ে যেতে। তাই তারা কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেয়। এখন পর্যন্ত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সমাধানে সবচেয়ে সফল প্লাটফর্ম এই আস্তানাই। এখানে ইরান- তুরস্ক- সিরিয়ার কিছু বিরোধী দল- সিরিয়ার আসাদ সরকার এবং রাশিয়ার মাঝে আলোচনা হয়েছে। তবে এসব আলোচনায় আমেরিকা, তাদের সহযোগী ইসলামিস্ট গ্রুপসমূহ এবং কুর্দিদের বাইরে রাখা হয়। আস্তানা আলোচনায় ৮টি বৈঠক হয়েছে। এখানে ইরান- তুরস্ক- রাশিয়া এবং বাশার আল আসাদের সরকারের মাঝে মোটামুটি সমঝোতার হওয়ায় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ প্রায় শেষ হবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।

তবে কিভাবে এই যুদ্ধের ইতি ঘটবে এবং ভবিষ্যৎ সিরিয়ায় কে কোন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে ইরান ও তুরস্কের মাঝে চূড়ান্ত ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তুরস্ক চায় তাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে সেই লক্ষ্যে ওরা আসাদ সরকার পরিবর্তনের দাবী থেকে সরে আসলেও বিরোধী গ্রুপগুলোকে পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে। ইরান এই প্ল্যানে মোটামুটি নাখোশ। তারা মাঠ পর্যায়ে আসাদ সরকারের পক্ষে সর্বাধিক সৈন্য ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে, সিরিয়ার অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে ব্যাপক আর্থিক সাহায্যও করেছে ইরান। ফলে তারা চায় সিরিয়ায় সম্পূর্ণ বিজয় এবং ভবিষ্যত সিরিয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা।

যেহেতু তুরস্ক তাঁর সীমান্তবর্তী কুর্দি ইস্যুতে ইরান এবং ইরানের সহযোগী আসাদ সরকারের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না। তাই তুরস্ক নিজ সীমান্তবর্তী এলাকায় একক ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া আস্তানা বৈঠকগুলোতে মার্কিন শক্তি’র কোনো প্রতিনিধি ছিল না। তাই এখন আমেরিকা কুর্দিদের ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে মাঠের খুব স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টে অবস্থান ধরে রাখতে। কুর্দিদের সমর্থনের মাধ্যমে একই সময়ে তুরস্ক এবং ইরানকে চাপে রাখতে পারছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই পরিবেশে রাশিয়া ব্যালেন্স ধরে রাখতেই ব্যস্ত।

তাই সিরিয়ার যুদ্ধের শেষ দিকে এসে আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল সমীকরণের ফলাফল দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ!

রাশিয়া চায় আমেরিকার আফগান- ইরাক যুদ্ধের হতাশাজনক পরিণতি এড়িয়ে সিরিয়ায় নিজেদের বন্দরের নিশ্চয়তা নিয়ে ওখান থেকে বের হয়ে যেতে। তুরস্ক এই পর্যায়ে এসে আমেরিকাকে অগ্রাহ্য করে রাশিয়ার সাথে সমঝোতা করে তুরস্ক- সিরিয়া সীমান্তের ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত এবং ভূমিকা নিতে চায়। আমেরিকা এটা আগে থেকেই আন্দাজ করে নিজেদের পুরান মিত্র কুর্দি গ্রুপকে ফিল্ডে এনে সেট করে রেখেছে। ঐদিকে ইরান নিজেদের উপর এতই কনফিডেন্ট যে রাশিয়ার ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে হলেও নিজেদের ইনভেস্টের নিরাপত্তা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য পৌঁছেছে!

সীমান্তে তুর্কি- কুর্দি বিবাদ, ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ইরানের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, রাশিয়ার বের হয়ে যাবার তাড়াহুড়া আর অফিশিয়াল সমীকরণের বাইরে থেকে সুপার পাওয়ার আমেরিকার কলাকৌশল, সব মিলিয়ে এখন লোকাল, রিজিওনাল, গ্লোবাল এবং সুপার পাওয়ারগুলোর একে অপরের বিপরীতমুখী নিজ নিজ স্বার্থ রাষ্ট্র পর্যায়ে নতুন সংঘর্ষ তৈরি করেছে। এই গ্রেট গেমে সিরিয়ার ভূমিকা খুবই কম, শুধু ভূমিটাই ওদের কিন্তু ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে বাশার আল আসাদের ভূমিকা প্রায় নগণ্য!

শুরুর ২টি গ্রুপ এখন মোটামুটি ৪টি আলাদা ভাগে বিভক্ত হয়েছে। ১- তুরস্ক ( এককভাবে মাঠে নিজ সামরিক বাহিনী প্রবেশ করিয়েছে এবং সমর্থন দিচ্ছে সিরিয়ার বিরোধী দলকে), ২- ইরান (এককভাবে মাঠে নিজ সামরিক বাহিনী রেখেছে এবং সমর্থন দিচ্ছে আসাদ সরকারকে), ৩- রাশিয়া ( ইরান- তুরস্ককে নিয়ে আসাদ সরকারের ভবিষ্যৎ এবং নিজ সামরিক ঘাটির নিরাপদ করতে একটি সমঝোতা চাইছে) এবং ৪- আমেরিকা ( আইসিসের সাথে সাথে সিরিয়া থেকে সুন্নি সিন্ডিকেট ছিটকে যাবার পর এখন কুর্দিদের সমর্থন যুগিয়ে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নিজ অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া)। তুরস্ক প্রতিবেশী, ইরানও তাই, রাশিয়া এসেছে আসাদ সরকারের আমন্ত্রণে এবং মার্কিন সহযোগী কুর্দিরা ঐ অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। ফলে এই ৪টি গ্রুপই বৈধভাবে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং উল্লেখযোগ্য সামরিক শক্তির মালিক। ওরা আইসিস না যে তাড়া খেয়ে মাঠ থেকে পালাবে। বরং মাঠে প্রত্যেকেরই বৈধতার পাশাপাশি বেশ শক্তিশালী স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান ও নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আছে এবং এটাই আতংকের কথা।

তাই সব মিলিয়ে বলতে হচ্ছে সিরিয়ার সর্বশেষ সিচুয়েশন খুবই সিরিয়াস!

বিজ্ঞাপন

৬৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরির সুযোগ
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৪৫

আড়ংয়ে চাকরির সুযোগ
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:২২

আরো