Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুক্তিপণের টাকা নিয়ে অপহরণকারীর সঙ্গেই বসে ছিলেন বাবা


১০ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:২২ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:২৯

ঢাকা: রাজধানীর ডেমরা ডগাইর এলাকার সাত বছরের শিশু মনিরকে অপহরণ করা হয়েছিল। তার মুক্তির জন্য কিছু টাকা নিয়ে নির্ধারিত স্থানে বসেও ছিলেন শিশুটির বাবা। সারারাত বসে থেকেও পাননি ছেলে বা অপহরণকারীদের দেখা। পরে পুলিশের সহায়তায় ছেলেকে পেয়েছেন ঠিকই, তবে জীবিত নয়, মৃত।

গত রোববার (৭ এপ্রিল) শিশু মনিরকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। পরে বুধবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের উপ কমিশনার ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

উপকমিশনার জানান, গত রোববার দুপুরে শিশু মনির তার দুই বোনের সঙ্গে ওই মসজিদে মক্তবে কোরআন পড়তে যায়। পড়া শেষে সব শিশু চলে গেলেও মনির বাসায় ফেরে না। বাবা মাও বিকেল থেকে ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন। মনিরকে খুঁজতে এলাকায় মাইকিংও করা হয়।

অন্যদিকে বেলা ১১ টায় মাদ্রাসা ছুটি হওয়ার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রিন্সিপাল আব্দুল জলিল হাদী (৪২) এবং দুই ছাত্র আহাম্মদ সফি তোহা (১৬) ও মো. আকরাম (২২) মনিরকে অপহরণ করে। এরপর তাকে মাদ্রাসার পাশে থাকা নির্মাণাধীন মসজিদ মসজিদুল-ই-আয়েশায় নিয়ে যায়। ওই মসজিদেরও ইমাম আব্দুল জলিল হাদী।  সেখানে নেয়ার পর মসজিদের সিঁড়িতে মনির কান্না শুরু করে। তখন অপহরণকারীদের একজন শিশুটির মুখ চেপে ধরে। মুখ চেপে ধরায় মনির আরো জোরে চিৎকার শুরু করে। তখন প্রিন্সিপাল হাদীর গামছা দিয়ে মনিরের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এক পর্যায়ে সে মারা যায়। শিশুটি মারা গেছে বুঝতে পেরে তার হাত-পা বেঁধে সিমেন্টের একটি বস্তায় ভরে সিঁড়ির পাশে রেখে দেওয়া হয়।

শিশু মনির মারা গেছে জেনেও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, মনিরের বাবা সাইদুল হকের কাছে রাতে ফোন করে তোহা। ফোনে তার কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয় এবং টাকাটা ওই মসজিদের লাশ রাখার খাটিয়ায় রেখে আসতে বলা হয়। টাকা না পেলে সন্তানকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

মনিরের বাবা বহুকষ্টে এক লাখ টাকা জোগাড় করে মসজিদে নিয়ে যান। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় মসজিদেই অপেক্ষা করেন এবং টাকাটা খোদ অপহরণকারী মসজিদের ইমাম হাদির কাছেই রাখেন। সারারাত অপেক্ষার পরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে পরদিন টাকা নিয়ে চলে যান তিনি।

বিষয়টি পুলিশকে জানালে পরদিন (৮ এপ্রিল) বিকেল পাঁচটায় পুলিশ মসজিদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার সিঁড়ির মাঝখান থেকে বস্তাবন্দি মনিরের মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর সন্দেহভাজন হিসেবে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও তার ছাত্র তোহাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু প্রথমে তারা অস্বীকার করে বলে জানান ডিসি ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রথমে স্বীকার না করলেও মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেন প্রিন্সিপাল ও তোহা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মালিটোলা থেকে আকরামকে গ্রেফতার করা হয়।

আকরাম গতবছর মসজিদুল-ই-আয়েশা মসজিদের তারাবির নামাজ পড়িয়েছিলেন। এবছরও ইমামের পরিচিত হিসেবে তারাবির নামাজ পড়াতে এলাকায় আসেন। পরে তিনজনকেই ডেমরা থানায় দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/এসএমএন

অপহরণকারী ডেমরায় শিশুকে অপহরণের পর হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর