নেই গণপরিবহন, পথে বেড়েছে ভোগান্তি
২১ আগস্ট ২০১৮ ১৪:০৮ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০১৮ ১৭:৩১
।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে প্রায় ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাননি সুজাউদ্দিন ও তার স্ত্রী। পরে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে রিকশায় চেপে সায়েদাবাদ বাস স্টেশনে রওয়ানা হন তারা। ঈদে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে যাবেন। সায়েদাবাদে বাসের টিকেট আগে কেটে রাখায় সেখানে ১২টার মধ্যে পৌঁছলেই চলবে। তাই প্রায় দুই ঘণ্টা হাতে সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন এই দম্পতি।
শুধু এ দম্পতিই নয়, রাজধানীতে ঈদ যাত্রার শেষ দিনে এসে গণপরিবহন সঙ্কটে পড়েছেন প্রায় সবাই। বিশেষ করে মূল স্টপেজ ছাড়া যারা মধ্যবর্তী স্থানগুলো থেকে বাস ধরতে চাইছেন তারা পড়ছেন বিপাকে। রাস্তায় গণপরিবহন কম। যেগুলো রয়েছেন তাও সিটিং কিংবা গেটলকের ভান করে রাস্তায় চলছে। এতে বেশ বিপাকেই পড়ছেন যাত্রীরা।
বাসের অপেক্ষায় রাজধানীর প্রতিটি স্টপেজেই অসংখ্য যাত্রীকে ব্যাগ-বোঁচকা হাতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে পুরো শহরজুড়ে। মোড় কিংবা গলির মুখে সে সব যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, গণপরিবহন না থাকায় সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশার জন্য রীতিমত যুদ্ধে নামতে হয়েছে। বাড্ডা লিংক রোড থেকে সদরঘাটে কিংবা সায়েদাবাদে যেতে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে তাদের।
মেরুল বাড্ডায় কথা হয় বরিশালের লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে। তারা ৫ জন মিলে সদরঘাটে যাওয়ার জন্য একটি সিএনজি অটোরিকশা ঠিক করেছেন ৬০০ টাকায়। তিন জনের জায়গায় ৫ জন যাত্রী কিভাবে যাবেন এমন প্রশ্নে তিনি বললেন, ‘কোনোমতে যাইয়া লঞ্চ ধরতে পারলে হইলো।’ কুমিল্লার মেঘনা যাবার জন্য প্রথমে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ডে যাবেন বাড্ডার দুই পরিবার।
একসঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন সেই আনন্দে অনেক কেনাকাটাও করেছেন তারা। কিন্তু বাড্ডা থেকে সায়েদাবাদ কিভাবে যাবেন তার ব্যবস্থা করতেই ব্যস্ত এ দু’টি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। তাই রোদের মধ্যে নারী-শিশুদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সে দলের সদস্য আসমা বেগম বলেন, ‘একসঙ্গে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু যে ভোগান্তি তা বলে বোঝানো যাবে না। বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে পারবো কিনা তা নিয়েই চিন্তায় আছি।’
এদিকে অফিস-আদালত ছুটি হয়ে যাওয়ায় এখন অফিসপাড়ায় কোনো ভিড় নেই। যত ভিড় কিংবা জনস্রোত তা কেবল লঞ্চ, বাস আর ট্রেন স্টেশনমুখী। ঈদের নামে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি গণপরিবহনেই যাত্রীদের কাছ থেকে বখশিশের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতেও দেখা গেছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, সিটিং সার্ভিস হলেও অতিরিক্ত যাত্রী উঠানোর পাশাপাশি বাসগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। কোথাও কোথাও এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বিতন্ডাও হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরের ভিড় জমতে থাকে গাবতলী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান ও মহাখালী হয়ে দেশের অধিকাংশ এলাকার দূরপাল্লার বাস যাতায়াত করে।
এছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাচ্ছেন বিপুল সংখ্যক নগরবাসী। দুপুরে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ডিআইটি রোড হয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যেতে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে।
সারাবাংলা/এমএস/এমও