কুষ্টিয়া: গ্রামের মাঠজুড়ে এখন শুধুই হলুদ আর হলুদ। সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ জনপদ। প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেমন চোখ জুড়াচ্ছে, তেমনি সরিষা ক্ষেতকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে কৃষি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা। সরিষা চাষের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু উৎপাদনে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জীবনের চিত্র।
কুষ্টিয়া জেলার মিরপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে সরিষার আবাদ চোখে পড়ার মতো। প্রতিবছর এই মৌসুমে সরিষা ফুল ফুটলেও এবছর যেন হলুদের রঙ আরও গাঢ়।
বিশেষ করে মিরপুর উপজেলার এলাকা জুড়ে একসময় বিষবৃক্ষ তামাকের চাষ হতো, যা মাটি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ছিল ক্ষতিকর। এখন সেই জমিতেই চাষ হচ্ছে সরিষা। কম সময়ে ভালো ফলন এবং তুলনামূলক কম খরচে লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে সরিষা চাষে।
সরিষা ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে চারপাশ মাতোয়ারা। সেই সঙ্গে মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে মাঠ। সরিষা ক্ষেতে বসানো হয়েছে বাক্সবন্দী মৌচাক। এসব মৌচাক থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে খাঁটি মানসম্মত মধু। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা, পাশাপাশি মৌচাষিরা পাচ্ছেন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।
সরিষা চাষী মতিয়ার বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গড়ে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা উৎপাদন হয়। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ সরিষা ২ হাজার ৮শ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি বিঘা জমিতে লাভ হয় প্রায় ১৪ হাজার টাকা।’ কম সময়ে ভালো লাভ হওয়ায় সরিষা চাষকে লাভজনক ফসল হিসেবে দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা।
মৌচাষিরা জানান, মৌমাছি সাধারণত তিন কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে মধু সংগ্রহ করতে পারে। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির পরাগায়ণের ফলে ফসলের ফলনও বাড়ে। এক সপ্তাহ পরপর প্রতিটি মৌচাক থেকে দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। মাঠেই এই মধু কেজি প্রতি প্রায় ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসজুড়েই চলবে এই মধু আহরণ কার্যক্রম।
জেলাজুড়ে এই মৌসুমে প্রায় ২ কোটি টাকার মধু বিক্রি হবে বলেও জানান মৌচাষিরা।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, তামাক চাষ থেকে কৃষকদের দূরে রাখতে সরিষার বীজসহ নানা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সরিষা চাষের সঙ্গে যুক্ত মৌ খামারি উদ্যোক্তাদেরও কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। সরিষা চাষের পাশাপশি মধুর উৎপাদন হওয়ায় বেকারত্ব দূর হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় ১৫ হাজার ৯৫৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৬৯২ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সব মিলিয়ে, হলুদে মোড়া এই সরিষার মাঠ শুধু নান্দনিক সৌন্দর্যই নয়, সরিষা ও মধু উৎপাদনের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার গ্রামীণ অর্থনীতিতে যোগ করছে নতুন সম্ভাবনার রং।