Thursday 25 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারেককে সমর্থন জানিয়ে এনসিপি ছাড়লেন কেন্দ্রীয় নেতা মীর আরশাদুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:১৫ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:২৪

মীর আরশাদুল হক।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মীর আরশাদুল হক। তিনি দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। একইসঙ্গে এনসিপির মনোনয়ন ‘প্রত্যাখান করে’ নির্বাচন থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এনসিপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। প্রায় দেড়যুগ পর প্রবাস থেকে দেশে ফেরার দিনেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারির নেতৃত্বদাতাদের গঠিত দলটির নেতার কাছ থেকে এ ঘোষণা নিয়ে চট্টগ্রামে রাজনৈতিক পরিসরে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এননিপি থেকে সরে দাঁড়ানো মীর আরশাদুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়াও তিনি দলটির নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য এবং পরিবেশ সেলের প্রধানের দায়িত্বও পালন করছিলেন।

তার বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এনসিপি তাকে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল।

ফেসবুক পোস্টে মীর আরশাদুল হক এনসিপিতে তার সকল পদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি সব দায়িত্ব ও পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি এই মুহূর্তে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলাম। চট্টগ্রাম-১৬ সংসদীয় আসনে (বাঁশখালী) এনসিপির হয়ে আমি নির্বাচন করছি না।’

তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনটিকে ‘বিশেষ দিন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে এই ঘোষণাটি দিচ্ছি, যেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সুস্বাগতম।’

এনসিপির প্রতি ‘মোহভঙ্গের’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মীর আরশাদুল বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এনসিপির প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এই দল ও দলের নেতারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখে এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলাম, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছেন বলেই মনে করি আমি। এই ভুল পথে আমি চলতে পারি না। এই মুহূর্ত থেকে এনসিপির সঙ্গে আমার কোনও রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকবে। তাদের প্রতি শুভকামনা রইল।’

‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন ও পলায়নের দিন আমি এতোই অভিভূত হয়েছিলাম যে মনে হয়েছিল এবার নতুন একটি বাংলাদেশ হবে। যেখানে মানুষের ন্যূনতম অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার বিপরীত। জুলাই অভ্যুত্থানের ১৪০০ অধিক শহীদ, হাজার-হাজার আহত এবং এত আত্মত্যাগের পরও একটা শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্যতার বাংলাদেশ দেখতে পাইনি। এনসিপিও এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।’

‘অস্থিরতা তৈরি করা, পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন তৈরি করা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির একটি প্রবণতা বর্তমানে বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটা গোষ্ঠী বা চক্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।’

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক উত্তরণে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। প্রয়োজন আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক সচেতন, উন্নত ও প্রগ্রেসিভ চিন্তার নতুন তরুণ নেতা, নতুন উদ্যোগ ও বর্তমান বাংলাদেশপন্থি দলগুলোকে সংগঠিত করা, শক্তিশালী করা।’

‘দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই আমি সচেতনভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বহুবার আক্রমণ নির্যাতনের শিকার হয়েছি। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সবসময় আমার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষের স্বার্থ।’

তারেক রহমানের প্রতি আস্থা রাখার কথা জানিয়ে মীর আরশাদুল বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার কোনো বিকল্প নেই। জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই মুহূর্তে সবাইকে ধারণ করে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার দক্ষতা ও সক্ষমতা তিনিই রাখেন।’

‘যখন অন্যান্য দল ধর্ম ও পপুলিজমকে প্রধান এজেন্ডা করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে, তখন তারেক রহমান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ভিশন জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। আগামী দিনে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত সমাধানের কথাও তিনি বলছেন। এই স্মার্ট অ্যাপ্রোচ আমাকে আকৃষ্ট করেছে।’

‘তরুণদের উচিত হবে পপুলিজম বা কোনো হুজুগে প্রভাবিত না হয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ, ভবিষ্যত ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে তারেক রহমানের জনকল্যাণমূলক ভিশন বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমর্থন জানানো৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাখলাম৷ ধন্যবাদ।’

এ বিষয়ে মীর আরশাদুল হকের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফ মঈনুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের প্রধান সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক পদত্যাগ করেছেন। এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে জোট করছে, এটা উনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। সেজন্য পদত্যাগ করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

১৭ বছর পর ঢাকায় তারেক রহমান
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর