উত্তরাঞ্চল থেকে ফিরে: প্রবাসী ও নির্বাচনের সময় দায়িত্বপালনকারীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে নিবন্ধনের বেড়েছে। প্রবাসীদের পাশাপাশি সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের ভোট দেওয়ার নিবন্ধনের সর্বশেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর। অথচ, এখন পর্যন্ত কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাংশ কর্মকর্তাও নিবন্ধনও করেননি। আবার কোনো অফিসে দুয়েকজন চাকরিজীবী নিবন্ধন করেছেন। বেশিরভাগেরই পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনে অনীহা রয়েছে।
গত এক সপ্তাহ (১৮-২৪ ডিসেম্বর) উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বেশ কয়েকটি সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ঘুরে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রংপুর সদর উপজেলার সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পোস্টাল ব্যালট নিবন্ধন নিয়ে কথা হয়। নাম প্রকাশ করার শর্তে তারা জানান, পুরো অফিসে ৩০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। এর মধ্যে মাত্র তিনজন পোস্টাল ব্যালটে ভোটপ্রদানের জন্য নিবন্ধন করেছেন। এ বিষয়ে অফিস প্রধানের কোনো নির্দেশনা নেই। তিনি বলেছেন, যাদের ইচ্ছা হয় করবেন, আর যাদের ইচ্ছা হবে না তারা করবেন না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, পছন্দের প্রার্থী নেই, তাই তারা ভোট প্রদানের জন্য নিবন্ধন করছেন না।
রংপুর গণপূর্ত অফিসের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পোস্টাল ব্যালটে কীভাবে নিবন্ধন করবেন সেটাই জানেন না তিনি। ওপর থেকে কোনো নির্দেশনাও নেই। কোনো প্রোমোশনাল ভিডিও নেই। প্রচার-প্রচারণা সেভাবে নেই। ফলে দুয়েকজন নিবন্ধন করে থাকতে পারেন। তবে বেশিরভাগই নিবন্ধনের বাইরে থাকবেন বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন করেননি। ৫০ জন স্টাফের মধ্যে অন্তত ১৫ জনকে জিজ্ঞেস করার পর মাত্র তিনজন জানিয়েছেন যে, তারা নিবন্ধন করেছেন।
বাকিরা কেন করেননি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ভোটের মাঠে না থাকায় তারা নিবন্ধন করেননি। এছাড়া, তাদের কোনো প্রার্থী নেই বলেও তারা নিবন্ধন করবেন না। এছাড়া, যদি ওপরের কড়া নির্দেশনাও থাকতো তাহলেও তারা নিবন্ধন করতেন। কিন্তু কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় কেউ নিবন্ধন করছেন না।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এলজিইডি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন নিয়ে তেমন কারও আগ্রহ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তেমন কোনো নির্দেশনাও নেই। ফলে জাতীয় নির্বাচনের যারা বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করবেন তাদের বেশিরভাগই নিবন্ধনের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
এলজিইডি অফিসের কেউ কেউ বলছেন, নিবন্ধন করে ভোট দিলে পরবর্তী সরকার এসে বিষয়টি নজরে আনবেন। কারা কারা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ভোট দিয়েছেন তাদের তালিকা বের করে শাস্তি দেওয়া হবে। এজন্য অনেকে পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন করছেন না।
এদিকে নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে জানা গেছে, পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিলেও কেউ জানতে পারবে না বা ধরতে পারবে না যে, কে ভোট দিয়েছে আর কে দেননি। তবে নিবন্ধন না করলে অবশ্যই জানা যাবে কে করেছে, আর কে করেননি। যারা পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন করছেন না, তাদের বিষয়ে সরকারের ওপর মহলকে জানানো হবে।
নিবন্ধন না করার ফলে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে একটা সুর তুলেছেন যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিংহভাগই ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকছেন। তারা এই সরকারের সিদ্ধান্তকে মেনে নিচ্ছে না বলেও আওয়াজ উঠেছে। এতে ভোট প্রদানের হার কম হবে বলেও বলা হচ্ছে। বিশেষ করে গণভোট আয়োজনে ভাটা পড়তে পারে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনেও প্রায়ই একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন নিয়ে তেমন কারও মাথাব্যাথা লক্ষ্য করা যায়নি। তারা মনে করছেন, দেশে আদৌ ভোট হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অফিসগুলোতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অনুসারী বেশি হওয়ায় তারা ইচ্ছা করে পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন থেকে দূরে থাকছেন। তাদের কথা, তারা যেহেতু ভোট দেবেন না, তাই নিবন্ধনও করেননি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা রুহুল কবীর মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সময় বাড়ানো হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা শেষ হলে যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের জন্য নির্দেশনা আসতে পারে। এছাড়া, নিবন্ধনের জন্য ব্যাপক প্রচারও চালানো হবে ।’