ঢাকা: যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিতকরণে ৩২ দফা দাবি সম্বলিত একটি জাতীয় তরুণ রঙিন পত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে জাতীয় তরুণ রঙিন পত্র উদ্যোগ।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকায় ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ ও সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সিডা-এর অর্থায়নে সিরাক-বাংলাদেশের ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট’ প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত চূড়ান্ত সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই রঙিন পত্র হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান। এ সময় দেশের আটটি বিভাগ থেকে আগত তরুণ প্রতিনিধিরা রঙিন পত্রে অন্তর্ভুক্ত ৩২টি দাবি সকলের সামনে উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিরাক-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এসএম সৈকত। তিনি জানান, তরুণ রঙিন পত্রটি যুবনেতৃত্বে পরিচালিত বিস্তৃত পরামর্শ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকারকে জলবায়ু অভিযোজন ও দুর্যোগ সহনশীলতার সঙ্গে সমন্বয়ের লক্ষ্যে ৩২টি মূল দাবি ও নীতিগত সংস্কারের প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. বিভাভেন্দ্র সিং রঘুবংশী বলেন, যুবরা দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা কেবল সুবিধাভোগী নয়, বরং পরিবর্তনের সক্রিয় এজেন্ট। তাই নীতি ও বাস্তবায়নে তরুণদের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হওয়া জরুরি।
সুইডিশ দূতাবাসের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে কার্যকর স্থানান্তর বর্তমানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের বহু তরুণ প্রবাসে চলে যাচ্ছে, যা এই আন্তঃপ্রজন্মীয় বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তরুণ রঙিন পত্রটি অত্যন্ত সুচিন্তিত, অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ এবং তরুণদের প্রকৃত অগ্রাধিকার প্রতিফলন করছে। তিনি সিরাক-বাংলাদেশের ‘পিস আড্ডা’ কর্মসূচির সফলতার কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘আজকের তরুণ সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো গুরুত্বসহকারে সমাধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুতে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।’ তিনি গ্রামীণ এলাকায় কিশোরী বিবাহ বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এর কারণ অনুসন্ধান এবং পিতামাতা, শিক্ষক ও সামাজিক প্রভাবকদের আরও সচেতন করার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে প্রজনন স্বাস্থ্য, জলবায়ু সহনশীলতা এবং কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে একটি প্লেনারি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন প্রফেসর ড. মো. আবু জাফর (পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর), ড. আশরাফী আহমেদ, এনডিসি (পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর), প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসাইন (স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও সাধারণ সম্পাদক, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম) এবং ডা. হালিদা হানুম আখতার (বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি)। সেশনটি সঞ্চালনা করেন ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু সাঈদ মো. হাসান।
আলোচনায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়, যুববান্ধব প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বক্তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এছাড়াও বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ড. সারোয়ার বারি, আইন কমিশনের সচিব সৈয়দ আজাদ সুবহানী, মেডিকেল এডুকেশন ও ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. আব্দুস সালাম খান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (যুব উইং) ডা. শেখ মোহাম্মদ জোয়ায়েদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে দেশের সকল বিভাগ থেকে ৫০ জন তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। উন্মুক্ত আলোচনায় তারা নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সম্মুখীন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও সিরাক-বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।