ইবি: বর্ণাঢ্য আয়োজনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস পালিত হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দিবসটি উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র্যালি, আরবীয় সংস্কৃতির প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।
এদিন বেলা ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের সামন থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গগন হরকরা গ্যালারিতে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
আলোচনা সভায় বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলীও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
এসময় বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, অধ্যাপক ড. মোহাঃ তোজাম্মেল হোসেন, অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক ড. আব্দুল মালেক, অধ্যাপক ড. আব্দুল মোত্তালিব, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. এ কে এম. শামছুল হক ছিদ্দিকী এবং অধ্যাপক ড. এ কে এম মফিজুল ইসলাম সহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আরবীয় সংস্কৃতি নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া আরব জাতির খাবার, পোষাক ও সংস্কৃতি প্রদর্শন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে উন্মুক্ত কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি নিয়ে উপ-উপাচার্য ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, আরবি ভাষার গুরুত্ব বিশ্বের মধ্যে এক অনন্য উচ্চতায় রয়েছে। আরবি জাতিসংঘের ভাষার মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের মধ্যে আরবি ভাষার গুরুত্ব রয়েছে। যেহেতু এটা কুরআন-হাদিসের ভাষা, এর গুরুত্ব অপরিসীম। আর বিশেষ করে মুসলমানদের কাছে আরবি ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়ভাবে, অর্থনৈতিকভাবে এবং সামাজিকভাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ভাষার সাহিত্য-সংস্কৃতি যদি শক্তিশালী হয়, তবে আরবি ভাষার সাহিত্য সংস্কৃতি অত্যন্ত শক্তিশালী এর ধারের কাছে অন্য ভাষা নেই। সুতরাং বিশ্ব আরবি ভাষা দিবসে আরবি যাদের মাতৃভাষা এবং আরবি যাদের মাতৃভাষার নয়, যারা অর্থনৈতিক কারণে, ধর্মীয় কারণে আরবি ভাষা শিখে আমি তাদেরকে অভিবাদন জানাচ্ছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘আরবি ভাষা শুধুমাত্র সাহিত্যের ভাষা নয় এটি সমগ্র ভাষার প্রাণ। আরবি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ব্যাবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত এবং রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় দিনে দিনে এ ভাষার প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সবাইকে আরবি ভাষা ও আরব সংস্কৃতি নিয়ে বেশি বেশি অধ্যয়ন করতে হবে।’
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, দিবসটি গত ১৮ ডিসেম্বর হলেও ছুটির দিন হওয়া উদযাপন স্থগিত হয়। পরবর্তীতে শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক পালন ও বিভিন্ন কারণে সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে ২২ ডিসেম্বর উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের ভাষা এবং জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩১৯০ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সর্বশেষ ২০১২ সালের অক্টোবরে ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের ১৯০ তম অধিবেশনে ১৮ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে এই দিনটি আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।