Monday 22 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরা খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি: ড. জাহেদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:০৬

-ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: আমরা (দেশ) খুব একটা খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি-ে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি’র শিক্ষক ড. জাহেদ উর রহমান।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা ‘ভয়েস’ ও দৈনিক ইত্তেফাক-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল ও জনপরিসর: বিদ্যমান সমস্যা এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জাহেদ উর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার সময় অনেকের মনেই ছিল যে, তাকে সরিয়ে আমি আমারটা জাহির করবো। এ সরকারের প্রতি আমরা বেশিকিছু আশা করি নি। তবে ন্যূনতম যতটুকু ছিল- সেটাও করা হয়নি। তবে আমি ৫ আগস্টের সময় ফিরে গেলে সরকার হিসেবে আমি ড. ইউনূস-কেই চাইবো। কারণ, তিনি ছাড়া এটা মোকাবিলা করা অসম্ভব। আমরা কোনোদিন গণতান্ত্রিক ছিলাম না। শেখ হাসিনা তার সময়ে দেশ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। আমরা সম্ভবত খুব একটা খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সামনে নারীরা দাঁড়িয়ে গেছে, সাইবার বুলিংয়ের সামনেও তারা দাঁড়াতে পারবে। যারা গালি দিচ্ছে, তারা এক সময় ক্লান্ত হয়ে যাবে। তারপর নারীদেরই সুযোগ। একজন আমাকে বলল অমুক নারীকে এত বকাঝকা দেওয়া হচ্ছে তারপরও তাকে থামানাও যাচ্ছে না। এভাবেই আসলে এগিয়ে যেতে হবে।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরা বেশি আক্রমণের শিকার হচ্ছে। তারা যখন কোনো দল করে, তখন রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের বুলিং করা হচ্ছে। তাদের মত প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে ফেসবুক বা মেটা এখন ভালো কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। যেমন ইলিয়াস হোসেনের ফেসবুক সরিয়ে দিল মেটা। কারণ, তার পোস্টগুলো সেগুলোর মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এ পরিসর ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে, যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি একদিকে যেমন নাগরিক সক্রিয়তার সুযোগ তৈরি করেছে, অন্যদিকে হয়ে উঠছে দমন, ভীতি ও নিপীড়নের শক্তিশালী হাতিয়ার।

তারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান নাগরিক সংহতির একটি তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, হ্যাশট্যাগ ও অনলাইন কনটেন্টের মাধ্যমে জনমত সংগঠিত হয়ে তা রাজপথে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু এই আশাব্যঞ্জক মুহূর্ত অল্প সময়ের মধ্যেই ম্লান হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় শক্তির প্রতিক্রিয়ায় সেই উন্মুক্ত পরিসর আবারও সংকুচিত হতে চলেছে।

চরিত্র হননের প্রসঙ্গ টেনে বক্তারা বলেন, ডিজিটাল অধিকার রক্ষার নামে প্রণীত আইনসমূহ বারবার সংশোধিত হলেও বাস্তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার পরিবর্তে অস্পষ্টতা ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হলেও, আগের দমনমূলক ধারা ও চর্চার অনেকটাই নতুন আইনে রয়ে গেছে। এর ফলে সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী ও অধিকারকর্মীরা এখনো দমন-পীড়নের স্বীকার হচ্ছেন। জেন্ডার ডিসইনফরমেশন বা জেন্ডারভিত্তিক অপতথ্য বলতে এমন পরিকল্পিত ভ্রান্ত বা বিভ্রান্তিকর তথ্যপ্রচারণাকে বোঝায়, যা বিশেষভাবে নারী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় মানুষদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। এর উদ্দেশ্য হলো সামাজিক কুসংস্কার জোরদার করা, চরিত্র হনন, ভয় দেখানো এবং নাগরিক অংশগ্রহণ থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা। বাংলাদেশে নারী সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে অপপ্রচার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট, ধর্ষণ ও সহিংসতার হুমকি এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই আক্রমণগুলো শুধু ডিজিটাল পরিসরেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং তা বাস্তব জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং রাজনৈতিক নীরবতা তৈরি করে।

বক্তারা আরো বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর হত্যাকাণ্ড এই সংকোচনের একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। তার মর্মান্তিক মৃত্যুর জের ধরে, প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মত স্বাধীন গণমাধ্যম ও ছায়ানট এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সংঘবদ্ধ হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীরের ওপর শারীরিক নির্যাতন প্রমাণ করে যে, মতভিন্নতা এখন প্রাণনাশের ঝুঁকি তৈরি করছে। অগ্নিসংযোগে আক্রান্ত ডেইলী স্টার ভবন থেকে উদ্ধারকৃত নারী সাংবাদিকদের ওপর হয়রানি এই সহিংসতাকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

উগ্রবাদ ও সাংস্কৃতিক দমনের বিষয়ে তারা বলেন, ডিজিটাল উসকানি ও ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে সাম্প্রতিক সময়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাউল শিল্পী, নাট্যদল, বসন্ত উৎসব কিংবা নারী ফুটবল ম্যাচ ইত্যাদি সবকিছুই উগ্রবাদী চাপের মুখে পড়ছে। বিভিন্ন ব্যানারে সংগঠিত গোষ্ঠীগুলো সহিংসতা চালিয়ে সামাজিক ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, নারী নির্যাতনের ঘটনায় অপরাধীদের সামাজিকভাবে ‘বীর’ হিসেবে উপস্থাপন করা এবং রাষ্ট্রীয় নীরবতা, যা দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে আরও পোক্ত করছে। নাগরিক স্বাধীনতা দমনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হলেও এর উত্তরাধিকার এখনো সক্রিয়।

সভা থেকে ডিজিটাল ও নাগরিক পরিসর পুনরুজ্জীবিত করতে সুপারিশ ও নীতিগত দাবি জানায় সংগঠনটি। সেগুলো হলো- মতপ্রকাশ, সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য স্পষ্ট আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা; অস্পষ্ট ও দমনমূলক আইন বাতিল বা সংশোধন; স্বাধীন নাগরিক ও মিডিয়া কমিশন গঠন; আইনশৃঙ্খলা বাহিনির জবাবদিহি ও জেন্ডার সংবেদনশীল প্রশিক্ষণ; জেন্ডারভিত্তিক অপতথ্য মোকাবিলায় জাতীয় পর্যায়ে ডিজিটাল সাক্ষরতা কর্মসূচি; নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের স্বচ্ছতা ও ভুক্তভোগী-কেন্দ্রিক প্রতিকার ব্যবস্থা; নির্বাচনপূর্ব সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতাবিরোধী অঙ্গীকার।

সারাবাংলা/এমএইচ/এসআর
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর