Monday 22 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বেড়েছে দুর্যোগ, জীবিকা হারাচ্ছে উপকূলের মানুষ

রেজাউল ইসলাম তুরান ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:০২

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও ঘনত্ব ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও খরায় দেশের উপকূল ও নদীবিধৌত (উপকূলীয়) অঞ্চলের মানুষ হারাচ্ছে বসতভিটা ও জীবিকা। এর ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। একাধিক গবেষণা সংস্থার আশঙ্কা, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে দেড় কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বছরের পর বছর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য কার্যকর সমাধান এখনো অধরা।

দুর্যোগের ভয়াবহতা বাড়ছে

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, গত ৩০ বছরে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একের পর এক ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, অস্বাভাবিক বন্যা ও খরার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ভিটেমাটি ও সহায়-সম্বল হারাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে উপকূলীয় নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। উপকূলজুড়ে ‘জীবনের লড়াই’ দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতেও।

বিজ্ঞাপন

জীবিকা হারিয়ে শহরমুখী মানুষ

লবণাক্ততার আগ্রাসন, নদী-খাল ও জলাশয় দখল ও দূষণের কারণে বহু মানুষ পেশা হারাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে তারা এক জেলা থেকে অন্য জেলা কিংবা রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরে আশ্রয় নিচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রায় ৬০ শতাংশ ঢাকায়, ২০ শতাংশ চট্টগ্রাম নগরে এবং বাকি ২০ শতাংশ অন্যান্য জেলায় অভিবাসী হয়েছে।

গবেষণার ফলাফল

‘ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি অ্যান্ড রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ইন লো-লাইং কোস্টাল সিটিজ অব বাংলাদেশ ইউজিং অ্যানালিটিক হায়ারার্কিক প্রসেস’ শীর্ষক একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেশের ২২টি শহরের ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর জার্নাল অব ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ-এ প্রকাশিত এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর একদল গবেষক। গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকির প্রকৃত প্রভাব মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কতটা ভয়াবহ, তা শুধু সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

বাস্তুচ্যুতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সতর্কতা

ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার-এর তথ্যানুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ২০৫০ সালের মধ্যে নতুন করে এক কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ জানিয়েছে, একই সময়ের মধ্যে দেশের প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বস্তিবাসীদের প্রায় ৭০ শতাংশই পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে নিজ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ

জলবায়ু সচেতনতা ও সুন্দরবন-উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক শুভ্র শচীন বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন ঘন দুর্যোগ, লবণাক্ততা, নদীভাঙন ও পানির সংকট মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে প্রভাবিত করছে।” তিনি আরও বলেন, কৃষিনির্ভর এলাকার মানুষ কাজ হারিয়ে শহরমুখী হচ্ছে—কেউ একা, কেউ পরিবারসহ। এতে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, যা একটি গভীর সামাজিক সংকটের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্লাইমেট সেন্ট্রালের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ ৩০ দিনেরও বেশি সময় ধরে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তীব্র তাপমাত্রার মধ্যে বসবাস করেছে।

ভবিষ্যৎ কোন পথে

বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাধার ভরাট, বন উজাড় ও অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ দেশের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। একটি আদর্শ শহরে যেখানে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকার কথা, সেখানে দেশের কোনো শহরেই সেই মানদণ্ড পূরণ হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এখনই পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যৎ সংকট আরও গভীর হবে—এমন সতর্কবার্তাই দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা।

বিজ্ঞাপন

চাকরি দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ
২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:২২

আরো

সম্পর্কিত খবর