ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাইয়ের অকুতোভয় বিপ্লবী যোদ্ধা শরীফ ওসমান বিন হাদি শির উঁচু করে শহিদ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি একজন অত্যন্ত সৌভাগ্যবান শহিদ। তার শাহাদাতের পর দেশবাসী তার অনেক বক্তব্য টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে শোনার সুযোগ পেয়েছেন। তার বক্তব্যে আমরা দেখতে পাই, তিনি বারবার শহিদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। আল্লাহ তার শহিদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেছেন। আজ তার দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন স্বার্থক হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’

রোববার (২১ ডিসেম্বর) ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাইয়ের অকুতোভয় বিপ্লবী যোদ্ধা শরীফ ওসমান বিন হাদির শাহাদাত উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিমের সঞ্চালনায় এ মাহফিলে বক্তব্য দেন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চাকসুর সাবেক ভিপি জসিম উদ্দিন সরকার এবং শহিদ শরীফ ওসমান বিন হাদির বড় ভাই ওমর বিন হাদী।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘শহিদ ওসমান হাদির পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, সৎ জীবন দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছে। তার শাহাদাতের পরে মানুষের মধ্যে যে জোয়ার, জজবা ও আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে তা এক বিরল ঘটনা। গতকাল তার নামাজে জানাজায় সরকার প্রধান, উপদেষ্টারা এবং দেশের রাজনৈতিক নেতারা সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আল্লাহ তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে তাকে দুনিয়ায় অতি উঁচু মর্যাদা দিয়েছেন এবং আমরা আশাকরি আখিরাতেও আল্লাহ তাকে অতি উঁচু মর্যাদা দান করবেন। তাকে হারিয়ে তার পরিবার-পরিজন শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। আল্লাহ তাদের এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তায়ালা শহিদ ওসমান বিন হাদিকে রাজকীয় মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ তার পরিবার-পরিজনকেও দুনিয়ায় বিরাট মর্যাদা দিয়েছেন এবং আমরা আশাকরি আখিরাতেও আল্লাহ তায়ালা বিরাট মর্যাদা দিবেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস শহিদ ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য দেন। কিন্তু ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের ব্যাপারে কোনো কথাই বলেননি। ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের ব্যাপারে অবশ্যই বক্তব্য দেওয়া উচিত ছিল। আমরা আশাকরি, তিনি এ ব্যাপারে জাতির সামনে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশবাসীর প্রশ্ন ওসমান বিন হাদির খুনিরা হামলার ছয় ঘণ্টা পর কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারল? কেন সরকার তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারল না? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা কী করেছে? গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের সহযোগিতাকারী কেউ লুকিয়ে আছে কিনা তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত।’ শহিদ শরীফ ওসমান বিন হাদির হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে হত্যাকারীদের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার জন্য সরকারকে যে আলটিমেটাম দিয়েছে তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য দাবি করছি। হাদির জানাজায় অংশগ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা যে ওয়াদা করেছেন তা অবিলম্বে পূরণ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ওসমান হাদি আধিপত্যবাদমুক্ত স্বাধীন-সার্বভৌম, ইনসাফপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব এখন আমাদের সকলের। এই দায়িত্ব ঐক্যবদ্ধভাবে পালনে এগিয়ে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা শহিদ শরীফ ওসমান বিন হাদির আশা পূরণ করেছেন। শহিদ শরীফ ওসমান বিন হাদি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের সুখ-শান্তিতে বসবাসের উপযোগী একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার স্বপ্ন- আধিপত্যবাদ মুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলেই তার স্বপ্ন স্বার্থক হবে। শরীফ ওসমান বিন হাদির শাহাদাত কবুল করে তাকে জান্নাতে অতি উচ্চ মর্যাদা দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এবং শহিদ ওসমান বিন হাদির পরিবার-পরিজনসহ সবাইকে হেফাজত করার জন্য দোয়া করেন।’
শহিদ ওসমান হাদির বড় ভাই ওমর বিন হাদি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই শরীফ ওসমান বিন হাদি সবসময় বলত ‘আমাকে আল্লাহ রক্ষা করবেন। আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব আল্লাহর। আল্লাহ আমাদের পরিবার-পরিজন ও দেশের ১৮ কোটি মানুষকে নিরাপত্তা দিবেন। আমরা দেশকে আধিপত্যবাদীদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। আমরা শোষণ-জুলুমের অবসান ঘটিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক ইনসাফপূর্ণ দেশ গড়ার জন্য রাজপথে নেমেছি।’
ওমর বিন হাদি আরও বলেন, ‘আমার ভাই ওসমান হাদি শাহাদাত বরণ করেছে। ওসমান যে স্বপ্ন দেখত সেই স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তার অসমাপ্ত বিপ্লব সমাপ্ত করতে এগিয়ে আসার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের পরিবার-পরিজন সকলের কল্যাণের জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করছি।’
আলোচনা শেষে দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। দোয়া মাহফিলে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে ওসমান হাদির শাহাদাত কবুল করে তাকে জান্নাতে অতি উচ্চ মর্যাদা প্রদান করার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।