ঢাকা: আওয়ামী লীগের শাসনামলে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার (জেআইসি) সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার তিন সেনা কর্মকর্তা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ আবেদন জানান তারা। প্যানেলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন ট্রাইব্যুনালের প্রথম সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ মামলার পাঁচটি অভিযোগ পড়ে শোনান। অভিযোগ পাঠ শেষে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা গ্রেফতার তিন আসামির কাছে অভিযোগ বুঝেছেন কি না- জানতে চান ট্রাইব্যুনাল।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু চার্জ গঠনের আদেশ পুরোটা বাংলায় পড়ে শোনানোর আবেদন করেন। তবে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন, আসামিরা লিটারেল পারসন।
পরে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ডিজিএফআই’র সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজহার সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়।
অভিযোগে বলা হয়, তাদের দায়িত্বকালীন সময়ে জেআইসি সেলে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে গুম করে রাখা হলেও তাদের মুক্তির কোনো ব্যবস্থা নেননি তারা।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন,
“মহামান্য আদালত, আমি নির্দোষ। ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।”
জবাবে বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ বলেন, “ইনশা আল্লাহ, ন্যায়বিচারই হবে।”
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তানভির মাজহার সিদ্দিকীও নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।
পরে চার্জ গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করবেন বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। এর বিরোধিতা করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ গঠনের আদেশ ও তারিখ নির্ধারণের পরই এ ধরনের আবেদন করা যেতে পারে।
এক পর্যায়ে আসামিপক্ষ পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রমের জন্য দুই মাস সময় চাইলে প্রসিকিউশন পক্ষ এর বিরোধিতা করে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আইনে চার্জ গঠনের পর ন্যূনতম ২১ দিনের মধ্যে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করার বিধান রয়েছে। আসামিপক্ষ বিচারকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করেন এবং প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। ওই দিন থেকেই এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।
এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, শাইখ মাহদী প্রমুখ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, ব্যারিস্টার মাহিন রহমান ও মাসুদ সালাহউদ্দিন। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এ মামলায় মোট ১০ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পলাতক অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক কর্মকর্তারা।