ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘জামিন বাণিজ্যে যারা লিপ্ত আছেন, তাদেরকে বলছি এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দেবেন না। ফয়সাল করিম মাসুদের জামিন হওয়ার সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না। হাইকোর্টে অস্ত্র মামলার জামিন সহজে হওয়ার কথা নয়। এটি তখনই হতে পারে যখন প্রভাবশালী আইনজীবীরা এসব মামলায় জামিন দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন।’
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের প্রিয় ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করেছে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের এক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী। তাকে র্যাব গ্রেফতার করেছিল গত বছর। এরপর তার জামিন হয়েছে হাইকোর্ট থেকে। এরপর থেকে জামিন দেওয়ার ন্যয্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-বিতর্ক উঠছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মামলায় আসামী কিভাবে অপরাধটিতে জড়িত, পুলিশ তার কোনো তথ্য অভিযোগপত্রে দেয়না। এমনকি আসামীর দলীয় পরিচয় পর্যন্তও মামলার কোনো কাগজে উল্লেখ করে না।‘
তিনি বলেন, ‘প্রথমেই বলে রাখি, হাইকোর্ট বিচারিক কাজে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। হাইকোর্টের উপর আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীর কোনো দেশে থাকে না, বাংলাদেশেও নেই। কাজেই সেখানে ফয়সাল করিম মাসুদের জামিন হওয়ার সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোন সম্পর্ক ছিল না। ফয়সাল করিম মাসুদ গতবছর জামিন পেয়েছিল অস্ত্র মামলায়। হাইকোর্টে অস্ত্র মামলার জামিন সহজে হওয়ার কথা নয়। এটি তখনই হতে পারে যখন প্রভাবশালী আইনজীবীরা এসব মামলায় জামিন দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এই আইনজীবীরা অধিকাংশই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। অভিযোগ রয়েছে যে তাদের প্রভাবে এসব জামিন হওয়া সহজতর হয়।
হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিনে বিচারিক বিবেচনা কতোটা থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে। যেমন: হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কিভাবে ৪ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন হয়েছিল, তা নিয়ে আমি কয়েক মাস আগে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলাম (২৩ অক্টোবর, ২০২৫)। এজন্য একশ্রেণীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমার পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করা হয়েছিল।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘জামিন পাওয়ার সুযোগ আমাদের আইনে রয়েছে। কিন্তু গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যে অপরাধীর সংযোগ অত্যন্ত স্পষ্ট, যে অপরাধী চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং যে ব্যক্তি জামিন পেলে পুনরায় অপরাধ করতে পারে বা অন্য কারো জীবন বিপন্ন করতে পারে, তাকে জামিন দেওয়া অস্বাভাবিক ও অসংগত। এ নিয়ে আমি প্রকাশ্যে বলেছি। প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা হওয়ার সময় উনার কাছে উচ্চ আদালতে অস্বাভাবিক জামিন আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলাম। কিছু জামিন নিম্ন আদালত থেকেও হয়েছে গত ১৬ মাসে। আমরা সেসব মামলার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মামলায় আসামী কিভাবে অপরাধটিতে জড়িত, পুলিশ তার কোনো তথ্য অভিযোগপত্রে দেয়নি, এমনকি আসামীর দলীয় পরিচয় পর্যন্তও মামলার কোনো কাগজে উল্লেখ করেনি। এরপরও আমি যথাযথ বিচারিক বিবেচনা না করে যেনতেনভাবে জামিন না প্রদান করার কথা বলেছি। কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জামিন বাণিজ্যে যারা লিপ্ত আছেন, তাদেরকে বলছি এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দিবেন না। এক গণহত্যাকারী পাশের দেশে বসে আমাদের জুলাই বীরদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিয়ে সেই গণহত্যাকারীর অনুসারীদের এই সুযোগ করে দেবেন না। না হলে, পরকালেও এর দায় আপনাদের নিতে হবে।’