Wednesday 17 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টিতে ফিরলেন রাঙ্গা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৯ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৭

রাঙ্গাকে ফুল দিয়ে বরণ করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ছবি: সারাবাংলা

রংপুর: জুলাই বিপ্লবের পর লাপাত্তা থাকা জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করে দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন এবং পুনরায় দলে ফিরে আসার আকুতি জানিয়েছেন।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে তার ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ স্বীকার করে নেতাকর্মীদের কাছেও ক্ষমা চান তিনি। পরবর্তীতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তাকে স্বাগত জানিয়ে দলে পুনর্বহাল করেন, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে দুর্নীতি, হত্যা ও ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের হওয়া একাধিক মামলা এবং তার ও পরিবারের ওপর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে, যা তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনকে ছায়াচ্ছন্ন করে রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রে জানা যায়, তার পুনর্বহালে কিছু নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, কারণ তার অতীত বিতর্ক দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ জাতীয় পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় ঘাঁটি শক্তিশালী করলেও দুর্নীতির অভিযোগগুলো দলকে চাপে ফেলতে পারে।

ভিডিওতে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির একজন কর্মী ছিলাম। ১৯৯৭ সালে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরে যোগ দিয়ে রংপুরের সাধারণ সম্পাদক হই। ২০০১ সালে রংপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দলের বিভিন্ন পদে থেকে কাজ করি এবং পরে মহাসচিব হই। এরশাদের মৃত্যুর পর কাউন্সিলে জিএম কাদের চেয়ারম্যান এবং আমি মহাসচিব হই। কিন্তু কোনো কারণে চেয়ারম্যান আমার ওপর দুঃখ পেয়ে পদ থেকে অব্যাহতি দেন। পরে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার হলে কষ্ট পেয়ে প্রেস কনফারেন্স করে অনেক কথা বলি। এখন বুঝি, এগুলো ঠিক হয়নি। আমি জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কোনো দলে যুক্ত ছিলাম না। আমার অনুসারীরাও দলে আছেন। এই ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাই এবং চেয়ারম্যান আমাকে ক্ষমা করেছেন। শেষ জীবনে দলে দায়িত্ব পেলে খুশি হব। নেতাকর্মীদের কাছে দুঃখ দিয়ে থাকলে ক্ষমা করে নেবেন।’

দলীয় সূত্র জানায়, ওই ভিডিও প্রকাশের পরপরই রাঙ্গাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। রাঙ্গা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেখা করে আবারও জাতীয় পার্টিতে ফিরেছেন। এদিন ফেসবুক লাইভে এসে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরার কথা জানান।

রাঙ্গা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আমার ভুল ছিল। আমি আমৃত্যু জাতীয় পার্টির হয়ে থাকব।’ জিএম কাদের তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘যোগদানকারী নেতাদের স্বাগত।’ এর আগে ২০২৪ সালের ১৯ এপ্রিল রাঙ্গাকে দলের মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং পরে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে ব্যাপক ভোটে হারিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান। মসিউর রহমান রাঙ্গাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে সংসদ সদস্য হন মসিউর রহমান। ২০০৮ সালে এ আসনে সংসদ সদস্য হন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। ২০১৪ সালে মসিউর রহমান রাঙ্গা আবার এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হন। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে জয়ী হয়ে তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হন।

মসিউর রহমান ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রওশন এরশাদ ইস্যুতে পক্ষ নেওয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের সব পদ-পদবি থেকে মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে রাঙ্গা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রংপুর-১ আসন থেকে লড়েন। ট্রাক প্রতীকে ২৪ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। বিজয়ী হন কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু (৭৩ হাজার ৯২৭ ভোট) এবং জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ পান ১০ হাজার ৮৯২ ভোট।

রাঙ্গার রাজনৈতিক যাত্রা বিতর্কময়। ১৯৯৭ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে দ্রুত উত্থান ঘটে তার। ২০০১ সালে রংপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপি শাসনামলে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়েন। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তারা সরকারের অনুগত হয়ে যান এবং ২০১৮-২৩ মেয়াদে প্রতিমন্ত্রী হন। পরিবহন খাতে তার আধিপত্য ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির টানা তিনবার সভাপতি এবং রংপুর জেলা মোটরমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতিক পালাবদলের জন্য খ্যাত তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিব্রতকর বক্তব্যের অভিযোগও রয়েছে।

জুলাই বিপ্লবের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাঙ্গা আত্মগোপনে চলে যান। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হত্যা, ভাঙচুরসহ একাধিক মামলা দায়ের হয়। দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের আবেদনে ৪ আগস্ট ঢাকা মহানগর আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব রাঙ্গা, ছেলে রাফাত রহমান জিতু, মেয়ে মালিহা তাসনিম জুঁই এবং পুত্রবধূ শাকিলা খানম কাকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। দুদক সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত চলছে, যার মূল্য কয়েকশ কোটি টাকা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গার প্রত্যাবর্তন জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা বাড়িয়েছে। তবে তার পুনর্বহালে কিছু নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, কারণ তার অতীত বিতর্ক দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। তবে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দলটি আসন্ন নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে এককভাবে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে রাঙ্গার মতো অভিজ্ঞ নেতার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ জাতীয় পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় ঘাঁটি শক্তিশালী করলেও দুর্নীতির অভিযোগগুলো দলকে চাপে ফেলতে পারে।

এ ব্যাপারে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান আমাকে ক্ষমা করেছেন। আমি জাতীয় পার্টিতে ফিরে এসেছি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে অবারও দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চাই। তবে এক্ষেত্রে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি। আর যদি মনোনয়ন না পাই তারপরও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’

এ ব্যাপারে দলের কো-চেয়ারম্যান রংপুর মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আমরা মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলে আবারও সাদরে গ্রহণ করেছি।’

বিজ্ঞাপন

লন্ডনের পথে জামায়াত আমির
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:২৯

আরো

সম্পর্কিত খবর