ঢাকা: চব্বিশের আন্দোলনে কুষ্টিয়ার ছয়টি হত্যাকাণ্ডসহ উসকানি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। মামলার ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে নিজের বিচারকাজ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য আবেদন করেছেন তিনি।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বিচারিক প্যানেলে ইনুর পক্ষে তার আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী এ আবেদন জানান। শুনানি শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে বলে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি করছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এ সময় প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিন পঞ্চমবারের মতো জবানবন্দি দেন কাশিমপুর কারাগার-২-এর সাবেক ডেপুটি জেলার সাখাওয়াত হোসেন। তিনি মামলার পঞ্চম নম্বর ও জব্দতালিকার সাক্ষী। গত ১৫ নভেম্বর তিনি ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
এর আগে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ইনুর বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন চতুর্থ সাক্ষী সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের উপপরিদর্শক শাহেদ জোবায়ের লরেন্স অবশিষ্ট জবানবন্দি দেন। তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জেরা করেন ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তিনি গত ৮ ডিসেম্বর প্রথম দফায় সাক্ষ্য দেন।
বুধবার সকালে কারাগার থেকে হাসানুল হক ইনুকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তার উপস্থিতিতেই সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
এর আগে ৭ ডিসেম্বর তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন তদন্ত সংস্থার রেকর্ড সংরক্ষণকারী এসআই মো. কামরুল হোসেন জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দিনের জেরা শেষ হয় এবং সেদিন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহাকে জেরা করেন ইনুর আইনজীবী।
মামলার প্রথম সাক্ষী মো. রাইসুল হক ১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়া শহরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার নির্দেশদাতা ও উসকানিদাতা ছিলেন হাসানুল হক ইনু। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এ ঘটনায় ছয়জন শহিদ হন। এজন্য ইনুর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এর আগে ৩০ নভেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। একই দিন ইনুর করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে ট্রাইব্যুনাল। গত ২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হয়। এতে শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী ও চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ শহিদ হন। আহত হন আরও অনেকে। এ ঘটনায় তদন্ত শেষে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করে প্রসিকিউশন।