চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক হিসেবে আব্দুল হান্নানকে আটক হওয়ার ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার সুন্দরপুর-বাগাডাঙ্গা এলাকার ঢাকিপাড়ায় চলছে নানা আলোচনা ও কৌতূহল।
এলাকাবাসী বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজমিস্ত্রির কাজের সুবাদে ঢাকায় বসবাস করা হান্নান এলাকায় একজন নিরীহ ও শান্ত স্বভাবের মানুষ হিসেবেই পরিচিত। তার আটকের খবরে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বিস্ময়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল হান্নানের বাড়ি সুন্দরপুর ইউনিয়নের ঢাকিপাড়া এলাকায়। জীবিকার তাগিদে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে আসছেন। দুই ঈদসহ বিশেষ উপলক্ষ্যে গ্রামে এলেও খুব অল্প সময়ের জন্যই অবস্থান করতেন। ফলে, এলাকার সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
হান্নানের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, তিনি কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকরাও একই মত প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, এলাকার কেউ কখনো তাকে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং কিংবা সহিংস কোনো ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে দেখেননি।
এ বিষয়ে হান্নানের মামা হেলাল উদ্দীন বলেন, দেড় থেকে দুই বছর আগে হান্নান তার মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দিয়েছিল। সে নিরক্ষর মানুষ হওয়ায় এফিডেভিট বা অন্য কোনো আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র করা হয়নি। এখন সেই মোটরসাইকেল দিয়ে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে তার দায় হান্নানের ওপর চলে আসছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান।
হান্নানের মামী শওকত আরা বলেন, ‘হান্নানের মা অনেক কষ্ট করে, মানুষের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে তাকে বড় করেছেন। সে ছোটবেলা থেকেই খুব সহজ-সরল। এমন ঘটনায় তার নাম জড়ানো আমরা মেনে নিতে পারছি না।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হান্নান আমাদের এলাকায় নিরীহ ছেলে হিসেবেই পরিচিত। সে কখনো কোনো রাজনৈতিক বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে আমার জানা নেই। বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।’
এলাকার শিক্ষক মেসবাউল ইসলাম বলেন, একটি মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করতে হলে যে এফিডেভিট করতে হবে, সে নিরক্ষর বলেই তাতে গুরুত্ব দেয়নি। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে গভীর তদন্ত দরকার।
এলাকাবাসী মাসুদ রানা বলেন, ‘হান্নান দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকে। এলাকায় খুব কম আসে। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনে আমরা সবাই অবাক।’
এদিকে হান্নানের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন নিরপেক্ষ ও প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হয়। তারা বলেন, মোটরসাইকেল বিক্রির বিষয়টি যাচাই করে দেখা হলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।