Monday 15 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাতক্ষীরায় সরিষা খেতে ১০ হাজার মৌ-বক্স, ৭৫ টন মধু উৎপাদনের আশা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:০০

সরিষা খেতে বসানো হয়েছে ১০ হাজার মৌ-বক্স। ছবি: সারাবাংলা

সাতক্ষীরা: সরিষা ফুলের হলুদ বরণে সেজেছে সাতক্ষীরার দিগন্তজোড়া মাঠ। চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে বসানো হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মৌ-বক্স। এসব মৌ-বক্স থেকে ৭৫ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

শীতের সকালে চির সবুজের বুকে কাঁচা হলুদের আল্পনায় সেজেছে আদিগন্ত সরিষা ক্ষেত। ফুলের রেণু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছিরা ফিরিয়ে এনেছে গ্রামীণ প্রকৃতির প্রাণচাঞ্চল্য।

কৃষি বিভাগের একটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে জেলায় ১৯ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। ২০২৪ সালে অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে জেলায় সরিষা চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে। চলতি ২০২৫ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলায় সরিষার আবাদ তুলনামূলক বেশি হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, আগের চেয়ে সরিষার আবাদ বেড়েছে বিধায় মধু ও মোমের উৎপাদনও বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

কৃষকরা জানান, আশ্বিন মাস থেকে সরিষা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৫-৬ মণ সরিষা উৎপাদনে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। গত বছরের ১৭ টাকার সার এবার ৩০ টাকায় কেজিতে ক্রয়ের অভিযোগ চাষীদের। তারা অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন কৃষি বিভাগের বিরুদ্ধে। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চান কৃষকরা।

সাতক্ষীরা জেলা মৌচাষি ও মধু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরার সরিষা খেত আমাদের মৌচাষিদের জন্য আশীর্বাদ। সরিষা ফুলের প্রাচুর্যের কারণে এবার মধুর মান ও পরিমাণ-দুটোই ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি। কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ভেজালমুক্ত খাঁটি মধু উৎপাদনে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। এতে একদিকে কৃষক ও মৌচাষিরা লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো গেলে এই অঞ্চলের মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও স্থান করে নিতে পারবে। মৌচাষ এখন শুধু একটি পেশা নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় খাত।’

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সরিষার ফুল থেকে মধু ও মোম সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। প্রতিটি মৌ-বক্স থেকে মৌসুমে পাঁচ থেকে সাতবার মধু সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে প্রতি মণ সরিষা ফুলের মধু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকায়। মধু ব্যবসায়ীদের মতে, সরকারি সহায়তা পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও মধু রফতানি করা সম্ভব।

এদিকে ভেজাল মধু শনাক্তে ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের মাধ্যমে পরীক্ষা চালাচ্ছে জেলা নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর।

সাতক্ষীরা জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা দীপংকর দত্ত বলেন, ভেজাল শনাক্তে নিয়মিত অভিযান চলছে। কেউ ভেজাল পণ্য বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সরিষা খেতের পাশে মৌ-বক্স স্থাপনের ফলে পরাগায়ন বাড়ে এবং এতে সরিষার ফলন ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরা জেলার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এখানে লবণাক্ত সহিষ্ণু সরিষার পাশাপাশি অন্য জাতের সরিষাও চাষ করা হয়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মৌমাছি পালনের মাধ্যমে অনেক বেকার যুবক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। বর্তমানে ২৮ জন কৃষক প্রায় ১০ হাজার মৌ-বক্স স্থাপন করেছেন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এবার ৭৫ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভ্রাম্যমাণ মৌচাষিরা সরিষা ছাড়াও বরই, লিচু ফুল ও সুন্দরবনের আশপাশে মৌ-বক্স বসিয়ে সারাবছর মধু সংগ্রহ করেন। এ খাতে জেলায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর