খুলনা: খুলনায় অধিকার আয়োজিত নির্যাতন বিষয়ক সেমিনারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার আহবান জানিয়েছেন বক্তারা। ১৫ বছরে কর্তৃত্ববাদী সরকার র্যাব-পুলিশকে ব্যবহার করে যেভাবে খুন, গুম, অপহরণ, মিথ্যা মামলায় প্রতিপক্ষকে হয়রানি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তা থেকে রাজনীতিবীদদের শিক্ষা নিতে অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, ৫ আগস্টের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য দেশকে আবারও বিপদে ফেলবে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার এক অভিজাত হোটেলে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সংঘটিত নির্যাতন, এ সংক্রান্ত আর্ন্তজাতিক আইনে কী বলা হয়েছে এবং বাস্তব পরিস্থিতি কী’ শিরোনামে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। অধিকার-এর পরিচালক এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের সঞ্চালনায় সভায় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন পুলক হাসান।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, হাসিনার পতন ঘটেছে, কিন্তু আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসেনি। নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা ইতোমধ্যে নিজেদের ক্ষমতাধর ভাবতে শুরু করেছেন। অপরপক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনিশ্চয়তার কারণে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করছেন। তারা আগামীতে কারা ক্ষমতায় আসবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছেন। এ সুযোগে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রক্তপাত ও জীবনহানি ঘটছে। অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত করে খুঁজে বের করে শাস্তির সম্মুখিন করা হলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরবে বলেও বক্তারা আশা প্রকাশ করেন।
অধিকার খুলনা শাখার ফোকাল পারসন মুহাম্মদ নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: আক্তার হোসেন, জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, কেএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (সাউথ) তাজুল ইসলাম, খুলনা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক ও টক্সিকোলজি বিভাগের লেকচারার ডা. রনি কুমার ব্রক্ষ্মা।
সভায় আলোচনা করেন খুলনা প্রেসক্লাবের আহবায়ক এনামুল হক, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন, এমইউজে সভাপতি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি মামলায় হয়রানির শিকার মো: রাশিদুল ইসলাম, হয়রানিমূলক মামলায় কারা নির্যাতিত এনটিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, ইউএনবির খুলনা ব্যুরো প্রধান শেখ দিদারুল আলম, আইসিটি আইনে মামলায় হয়রানি শিকার সিনিয়র সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু।
বক্তব্য দেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দা রেহানা আক্তার, জামায়াতে ইসলামির মহানগর এ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফরাজী, নাগরিক ঐক্যের জেলা সভাপতি আব্দুল মজিদ, গণঅধিকার পরিষদ নগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হাসান রাজ, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী শেখ ফারুক ও শহিদুল ইসলাম।
নির্যাতনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন-২০১৭ সালে পুলিশ কর্তৃক দুই চোখ উপড়ে ফেলা শাহজালাল হাওলাদার, র্যাব কর্তৃক গুম হওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন, ২০২০ সালে গুমের শিকার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূর মোহাম্মদ অনিক, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল পুলিশ কর্তৃক খুলনা থানায় ঝুলিয়ে নির্য়াতনের শিকার সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহমুদুল হক টিটু।