নরসিংদী: আজ ১২ ডিসেম্বর নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদী মুক্ত হয়। সম্মিলিত মুক্তি বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে গোটা জেলা হানাদারমুক্ত হয়। মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে নরসিংদীতে র্যালি এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খন্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওই খন্ড যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে শহিদ হয়েছিলেন ১১৬ জন বীর সন্তান। এর মধ্যে নরসিংদী সদরে ২৭ জন, পলাশে ১১ জন, শিবপুরে ১৩ জন, মনোহরদীতে ১২ জন, বেলাব উপজেলার ১৬ জন ও রায়পুরায় ৩৭ জন শহিদ হন।
স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা মার্চ মাস থেকেই সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদী পাক হানাদার মুক্ত হয়। নরসিংদীর স্বাধীনতাকামী মানুষের মনে এ দিনটি আজও স্মরণীয় দিন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান কাবিল এর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদীর এমন কোন স্থান নেই যেখানে ৭১-এ শত্রু সেনাদের নিষ্ঠুর ছোবল পড়েনি। ১৯৭১ সালে নরসিংদী জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক বাহিনীর সদস্যরা। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকেই নরসিংদী জেলায় প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। ১৯৭১-এ বর্তমান জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৭/২৮ জনকে ধরে নিয়ে পাকসেনাদের ক্যাম্প নরসিংদীর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে আটক রাখা হতো। নির্যাতন শেষে তাদের নিয়ে যাওয়া হতো বর্তমান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা মোড় সংলগ্ন তৎকালীন লোহারপুল এর নিচে। সেখানে ৪/৫ জনকে বসিয়ে রেখে তাদের সামনে ২০/২২ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। হত্যা শেষে লোহারপুলের নীচে সকলকে একসাথে মাটি চাপা দেওয়া হয়।’
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন জানান, ৭১’ এর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম শুরু হয় দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনে তা পূর্ণতা পায়। নিজস্ব মানচিত্র, নিজস্ব পতাকা পায় এ দেশের জনগণ। যাদের আত্মত্যাগে এ অর্জন, তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। ‘মহান বিজয় দিবস ২০২৫’ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, নরসিংদী কর্তৃক বর্ণিল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।