ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা চুরি করে পালানোর সময় গৃহকর্মী আয়েশা আক্তারকে (২০) ধরে ফেলেন গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজা (৪৮)। ২ হাজার টাকা চুরি করার কারণে লায়লা আফরোজের সঙ্গে আয়েশার বাকবিতন্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখালে সুইচ গিয়ার ও চাকু দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে লায়লা (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যা করে আয়েশা।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মোঃ নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২ হাজার টাকা চুরি করায় লায়লা আফরোজ আয়েশাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান ও রাগারাগি করেন। এই ঘটনায় পরদিন সকালে সুইচ গিয়ার ও চাকু নিয়ে ওই বাসায় প্রবেশ করে লায়লা আফরোজকে এলোপাথাড়ি কোপায় গৃহকর্মী। তখন মেয়ে নাফিসা ঘুমিয়ে ছিল। সে শব্দ পেয়ে জেগে উঠে ইন্টারকম এর মাধ্যমে সিকিউরিটিকে জানাতে গেলে মেয়েকেও আঘাত করা হয়।

অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: সারাবাংলা
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘তাদের কুপিয়ে হত্যা করার পর বাসা থেকে ল্যাপটপ ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় আয়েশা। এরপর মোবাইল সিংগাইর ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেয়। হত্যাকান্ডের দিন রাতে গৃহকর্মী আয়েশা তার মায়ের বাসায় ছিল। পরদিন সকালে স্বামী জামাল সিকদারসহ সে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকারা গ্রামে চলে যায়। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে চুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার হয়।
চুরির বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আয়েশার ভেতর স্পষ্ট ক্রিমিনাল ইন্টেনশন আছে। আয়েশার গলায় পোড়া দাগ রয়েছে। এর ভিত্তিতেই আমরা সহজেই তাকে চিহ্নিত করি। তার এই পোড়া দাগ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য আছে, একটি হলো মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে নিজে আগুন দেয় এবং আরেকটি এক বাসায় কাজ করার সময় চুলা থেকে আগুন লেগে পুড়ে যায়। চুরির দায়ে গৃহকর্মী আয়েশা এর আগে থানায় ধরা পড়েছিল। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় জিডি ছিল। পূর্বে সে আরেক বাসা থেকে ৮ হাজার টাকা চুরি করেছিল। এমনকি তার বোনের বাসা থেকেও চুরি করেছিল। পূর্ব থেকেই গৃহকর্মী চুরি করার অভ্যাস ছিল।
‘তার বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে। তাকে রিমান্ডে আনার পর এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে,’বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান তিনি।
এর আগে, গত ৮ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরে একটি বাসা থেকে মা লায়লা আফরোজ ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নাফিসার গলায় একাধিক গভীর ক্ষত এবং লায়লার শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা-মেয়েকে আঘাত করা হয়।

উদ্ধারকৃত ল্যাপটা, স্বর্ণালঙ্কার ও ছুরি। ছবি: সারাবাংলা
পারিবারিক সূত্র জানায়, নাফিসার বাবা আজিজুল ইসলাম সকালে স্কুলে যান। তিনি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় এসে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ দেখতে পান। এই ঘটনায় গত সোমবার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মামলা করেন তিনি।
আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, ভবনের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে চারদিন আগে ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেন। সকালে এসে বাসার কাজ করে চলে যেতেন। এর মধ্যে রোববার বাসার মূল দরজার চাবি হারিয়ে যায়। সন্দেহ হলেও গৃহকর্মীকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। মেয়েটির পরিচয় ও ফোন নম্বর চেয়েছিলাম। কিন্তু সে বলেছিল, আগুনে পুড়ে তার মা-বাবা মারা গেছেন। সে নিজেও আগুনে দগ্ধ হয়েছিল। এসব বলে পরিচয় ও ফোন নম্বর দেয়নি।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার দিন সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে সাদা সালোয়ার কামিজ, প্রিন্টের ওড়না ও পায়ে কেডস জুতা পরে ভবনের সিঁড়ি দিয়ে ধীরস্থিরভাবে নেমে আসছেন এক তরুণী। তার পিঠে ব্যাগ ও মুখে ছিল মাস্ক। ওই সময় ভবনের প্রধান প্রবেশপথে বসে ছিলেন তিনজন। ওই তরুণী বের হওয়ার সময় তাদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে গেট খুলে দেন। পরে ভবন থেকে বেরিয়ে ওই তরুণী অটোরিকশায় উঠে চলে যান।